মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : যৌতুকের দাবিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শিরিন হত্যা মামলার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনায় জড়িত স্বামী মিঠু ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার হয়নি।

পরিবারের অভিযোগ, হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে আসামীরা পলাতক। তাই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত শিরিনের পরিবার ও এলাকাবাসী। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন , অসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর ভোরে কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে কম্বল পেঁচানো অবস্থায় গৃহবধু শিরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘরে স্বামী ট্রলি চালক মিঠু সিকদারের সাথে থাকতো সে। কিন্তু শিরিনের মরদেহ ঘরে রেখে পালিয়ে যায় মিঠু। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিনের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। ওইদিনই শিরিনের পিতা মোছলেছ হাওলাদার বাদি হয়ে জামাতা মিঠু সিকদার, শ্বশুড় বসির সিকদার, শ্বাশুড়ী কুলসুম বেগমসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু ঘটনার ১৬দিনেও অভিযুক্ত মিঠুসহ কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি।

শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শিরিনের ভাই নান্নু মিয়া বলেন, যৌতুক দিতে না পারার কারনে অন্তঃসত্ত্বা বোন শিরিনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এ নির্যাতনের দৃশ্য দেখেছে ঘটনার সময় ঘরে থাকা তার বোনের ছেলে ইমাম হাসান। তাকে হত্যার পর লাশ কম্বল মুড়িয়ে ঘরের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী মিঠু। কিন্তু পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

শিরিনের বোন জাকিয়া বেগম ও মা হালিমা বেগম জানান,অনাগত সন্তান নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো শিরিনের। কিন্তু সামান্য যৌতুকের জন্য গর্ভের সন্তানসহ শিরিনকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালিয়ে মিঠু পালিয়ে যায়। সে যদি হত্যাই না করতো তাহলে মৃতদেহ কম্বল চাপা দিয়ে পালিয়ে গেলো কেনো।

চাকামইয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা মকবুল হোসেন ও সাবেক ইউপি টেয়ারম্যান মজিবর রহমান অভিযোগ করেন, একজন গর্ভবতী মাকে হত্যার পর আসামীরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এ নির্মম হত্যাকান্ডের তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই দাউদ মুঠো ফোনে বলেন, মামলার পরই আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও হাতে পাননি বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের বাইনবুনিয়া গ্রামের মোখলেছ হাওলাদারের মেয়ে শিরিনের সাথে এক বছর আগে পাশ্ববর্তী আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামের বসির সিকদারের ছেলে মিঠু সিকদারের বিয়ে হয় পারিবারিক সম্মতিতে। বিয়েতে স্বর্নালংকারসহ প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয় মালামাল দিয়ে তুলে দেয়া হয়।

পরিবারের অভিযোগ, শিরিন কালো ও খাটো এ অভিযোগ তুলে তাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। এ কারনে শিরিনকে আমতলীর শ্বশুড় বাড়ি ছেড়ে কলাপাড়ায় ভাড়া বাসায় উঠতে হয়। কিন্তু এখানে এসেও চলে নির্যাতন এবং গত ১৯ নভেম্বর তাকে হত্যা করা হয়।

(এমকেআর/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০২০)