চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : পিতার নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও আয়কর সনদ তৈরির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ার দু’নারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সদরঘাট থানা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার মূল হোতা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা বাদল কান্তি দাশকে পুলিশ খুঁজছে। এদিকে মামলা তুলে নিতে আসামি পক্ষ বাদি মধুসুদন দাশ ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সুমন কান্তি দাশ (৩৩),অরুণ কান্তি দাশ (৬৫),শিবু শংকর দাশ (৪৮), মিরা দাশ (৫৫) ও সেপু দাশ (৫০)।

মামলার বাদি মধুসুদন দাশ জানান, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বাদল কান্তি দাশ তার জ্যাঠাত ভাই। মধুসুদন দাশেল বাবার নাম ক্ষেত্রমোহন দাশ কিন্তু বাদল কান্তি দাশের বাবার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ। বাদল চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তার বাবার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ পরিবর্তন করে ক্ষেত্র মোহন দাশ লিখে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও আয়কর সনদ নেয়। একই সাথে রাউজান কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদও গ্রহণ করে। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষেত্রমোহন দাশের পুত্র সেজে জাল দলিল তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে মধুসুদন দালে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় মধুসুদন দাশ চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন আদালতে ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন, ক্ষেত্র মোহন দাশের পুত্র বাদল কান্তি দাশ, বাদল কান্তি দাশের পুত্র উজ্জ্বল কান্তি দাশ (৩৫) ও সুমন কান্তি দাশ (৩৩) ক্ষেত্র মোহন দাশের পুত্র অরুণ কান্তি দাশ (৬৫) ও শিবু শংকর দাশ (৪৮),অরুণ কান্তি দাশের স্ত্রী মিরা দাশ (৫৫) ও নারায়ণ চন্দ্র দাশের স্ত্রী সেপু দাশ (৫০)।

আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেয়। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাথিল করে।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদল কান্তি দাশ ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে এসএসসি ও ১৯৭৩ সালে এএইচসি পাস করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে জনতা ব্যাংকে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং ২০১৪ সালে অবসরগ্রহণ করেন। এতে বলা হয়, পূর্ব মাদারবাড়ির ওয়ারিশ সনদে বাদল কান্তি দাশ নামে ক্ষেত্র মোহন দাশের কোন পুত্র নাই। এসএসসি ও এইচএসসি সনদপত্রেও বাদল কান্তি দাশের পিতার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ উল্লেখ রয়েছে।

ব্যাংকে যোগদান ও চাকুরিকালের তার পিতার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ উল্লেখ আছে। কোথাও তার পিতার নাম ক্ষেত্র মোহন দাশ উল্লেখ নাই। তিনি অপরাপর আসামিদেও যোগসাজসে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পিতার নাম ক্ষেত্র মোহন দাশ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও আয়কর সনদ তৈরি করেছেন। এসব ব্যবহার করে তিনি ৬৭ নালাপাড়ার মধৃসুদন দাশের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন। আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) বাদল কান্তি দাশ জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল দলিল তৈরি করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি বাদল কান্তি ও তার সহযোগিরা বাদি মধুসুদন দাশ ও তার পরিবারের সদস্যদে হুমকি দিচ্ছেন।

পিবিআইয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক ফজলুল করিম বলেন, মামলাটি তদন্তকালের সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। তদন্তে বাদল কান্তি দাশ ও তার সহযোগিদের বড় ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি। বাদল জালিয়াতি করে এনআডি, পাসপোর্ট ও আয়কর সনদ নিয়েছে। তার পিতার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ, ক্ষেত্র মোহন দাশ নয়। ক্ষেত্র মোহন দাশেল পুত্র সেজে প্রকারণা করেছে সে। আমি আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

এদিকে পুলিশ এ মামলায় দু’নারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালতের নির্দেশে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাদি মধুসুদন দাশ জানান, বাদল দাশ ও তার সহযোগিরা প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষেত্র মোহন দাশের ছেলে সেজে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছিল এই বাদল দাশ। সে একজন জালিয়াত ও প্রতারক।

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০২০)