শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আসন্ন জাজিরা পৌরসভা নির্বাচনে লেজে-গোবরে পরিস্থিতিতে পরেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত মাত্র ১৭ হাজার ভোটারের এই পৌরসভাটিতে শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই প্রার্থী হতে চান ১৬ জন। খ শ্রেণির এই পৌরসভাটির এত অধিক সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মোট ১৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

গত ১৪ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের তফসীল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। এতে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পৌরসভার নামও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে। এবং ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে। ২০০০ সালে জাজিরা পৌরসভা গঠন করা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর ৪র্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জাজিরা পৌরসভা সহ গোটা জাজিরা উপজেলাটি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংখ্যাধিক্য। এখানে প্রতি বছরই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

এ বছর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম মাস্টার, বর্তমান মেয়র ইউনুছ বেপারী, সাবেক মেয়র আব্দুল হক কবিরাজ, সাবেক মেয়র আবুল খায়ের ফকির, যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শিকদার, শ্রমিক লীগ নেতা সেলিম মাদবর, আওয়ামী লীগ নেতা আবু ফকির, বর্তমান কমিশনার ইদ্রিস মাদবর, সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম আক্কাস, আব্দুস সামাদ খান, ইমরুল পারভেজ শিমুল, জসিমউদ্দিন মিন্টু মুন্সী, মনিরুল সরদার, এমদাদুল হক মাদবর, খোকন তালুকদার ধূসঢ় এবং ইমরান সাহিদ। এছাড়াও বিএনপি থেকে ২ জন এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে ১ জন মেয়র প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

জাজিরা পৌরসভার শতাধিক নাগারিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ বছর আগে পৌরসভাটি গঠন করা হলেও পৌরসভার কাঙ্খিত নাগরিক সুবিধা সংরক্ষণ ও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন হয়নি। তাই এবারের নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বর্ষীয়ান নেতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া (ইব্রাহিম মাস্টার) কেই পছন্দ করছেন এলাকার উন্নয়ন প্রত্যাশী অধিকাংশ নাগরিক। ইব্রাহিম মাস্টার বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স ওয়ান প্যারা কমান্ডো ইউনিট এর সিইও এবং হোলি আর্টিজান ও সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গী দমন অভিযান ও শাহ্ধসঢ়; পরাণ বিমান বন্দরে বিমান ছিনতাই রোধ অভিযানের সফল অধিনায়ক এম.এম ইমরুল হাসান এর গর্বিত পিতা।

জাজিরা পৌর এলাকার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন ইব্রাহিম মাস্টারকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলেই নৌকা প্রতীক সহজেই বিজয় লাভ করবে এবং পৌর এলাকার কাঙ্খিত সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন হবে। অপর দিকে যুব সমাজের একটি অংশ মনে করেন, দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে মনোনয়ন প্রদান করা হলে এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়ন হওয়া সম্ভব। জাজিরা পৌরসভা নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, ৩ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র বাছাই, ১০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন, প্রতীক বরাদ্দ ১১ জানুয়ারি এবং আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, এ বছর জাজিরা পৌরসভা নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্থী সংখ্যা অনেক। আমরা একাধিকবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে সভা করেছি। এতে প্রার্থী সংখ্যা ১৮ থেকে নেমে মাত্র ১৬ জন হয়েছে। ১৬ জনই দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন। আমরা প্রার্থী সংখ্যা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলাম। ১৬ জনের নিচে আনা সম্ভব হয়নি। এখন কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

শরীয়তপুর-০১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, আসন্ন জাজিরা পৌরসভা নির্বাচনের জন্য ১৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাননীয় সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) ১৬ জনের নামই দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আমরা প্রেরণ করবো। মাননীয় সভানেত্রী ও সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন সকলে মিলে সেটাই মেনে নিবেন বলে আমি আশাবাদী।

(কেএন/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০২০)