আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : জামায়াত নেতার উদ্যোগে আমতলী সরকারী কলেজ মাঠে আয়োজিত কনসার্ট বন্ধ করে দিয়েছেন প্রশাসন। কনসার্ট বন্ধ হওয়ায় উপজেলার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে উপজেলার সচেতন মহল জামায়াত নেতা প্রকৌশলী মোঃ রাকিব চৌধুরী রাজুর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাবের মধ্যে আয়োজিত কনসার্টের বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা এবং অর্থের উৎস খুজে বের করার দাবী জানিয়েছেন।

জানা গেছে, পিরোজপুর পৌর শহরের বাসিন্দা আমতলী উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ইউনিয়ন মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত গোলাম আজম চৌধুরীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিব চৌধুরী রাজু। রাজু ছাত্রজীবন থেকে শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর হয়ে যান ঘনিষ্ঠজন। তারই পৃষ্ঠপোষকতায় রাজু হাতিয়ে নেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আইসিটি প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরী। বাবার চাকুরী সুবাধে রাজুর বসবাস আমতলীতে।

১৯৯৮ সালে আমতলী একে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০০ সালে আমতলী ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি, ২০০৪ সালে জামায়াতের অর্থায়নে ঢাকা আমেরিকান ইউনিভাসিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র শিবির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন রাজু। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে লেখাপড়া শেষ করেন। লেখাপড়া শেষে জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর সুপারিশে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কম্পিউটার শাখায় আইসিটি প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল ইসলামী ব্যাংক শাখায় কর্মরত আছেন।

ইসলামী ব্যাংকে চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এক এক করে ইসলামী ব্যাংকের আমতলী পৌর শহরে, গাজীপুর বন্দর, ধানখালী ও তালুকদার বাজারে ইসলামী ব্যাংকের ্এজেন্ট ব্যাকিং আউটলেট শাখা স্থাপন করেন রাজু। ওই এজেন্ট ব্যাংকে জামায়াত ও শিবিরের লোকজনকে চাকরী দেন তিনি। ২০১৪ সালে আমতলীতে জামায়াত শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী সংগঠিত করে সেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন সময় নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেন। ওই সংগঠনের ব্যানারে সামাজিক কাজে নেমে পড়েন। দিন দিন প্রসারিত হতে থাকে তার জামায়াতি কর্মকান্ড।

গোপনে তিনি আমতলীসহ দক্ষিনাঞ্চলে জামায়াত-শিবিরের কার্মকান্ড চালিয়ে যান। প্রশাসনের চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমুখ্যে স্থাপন করেন সময় মেডিকেয়ার এন্ড হসপিস। সময় নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন সময় টেলিকমিউনিকেশন ও ব্রডব্যান্ড। গত বছর ডিসেম্বর মাসে সময় ইকো ব্রিকস এন্ড কনক্রিট প্রোডাক্ট ইন্ডাট্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন রাজু। সময়সহ সকল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। সময় হসপিস জামায়াতের চিকিৎসক দিয়ে পরিচালনা করে আসছেন এমন অভিযোগ আমতলী সচেতন মহলের। সময় সংগঠনের ব্যানারে সামাজিক কাজের ফাকে তিনি প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম। তার নেতৃত্বে আমতলীতে জামায়াত সু-সংগঠিত হচ্ছে এমন অভিযোগ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের।

গোপনে জামায়াত শিবিরকে আমতলীতে সু-সংগঠিত করতে কৌশলে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের উচ্চ পদস্থ কয়েকজন নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তাদের পৃষ্টপোষকতায়ই তিনি জামায়াত শিবিরকে গোপনে প্রতিষ্ঠিত করছেন এমন অভিযোগ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন সুধিজনের। আওয়ামীলীগের নেতাদের কাজে লাগিয়ে তিনি তার কাজ উদ্ধার করছেন। আওয়ামীলীগ নেতারা প্রকাশ্যে না এলেও তারাই তার চালিকা শক্তি। জামায়াত নেতা ইসলামী ব্যাংকে চাকুরীরত প্রকৌশলী রাকিব চৌধুরী রাজুর এমন কর্মকান্ডে উপজেলার সচেতন মানুষের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার এতো টাকার উৎস কোথায়? তারা তার অর্থের উৎস খুজে বের করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস উপেক্ষা করে জামায়াত নেতা রাজুর জামায়াতি কর্মকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দেশের বরেন্য সংগীত শিল্পী এনে আমতলী সরকারী কলেজ মাঠে সময় সংগঠনের নামে শুক্রবার কনসার্টের আয়োজন করেন। কনসার্টের আয়োজন করায় টনক নড়ে উপজেলার সচেতন নাগরিকের। এ কনসার্ট বন্ধের জন্য আমতলী পৌর শহরের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা রিপন মুন্সি বরগুনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন কনসার্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। কনাসর্ট বন্ধ হওয়ায় করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক থেকে আমতলী উপজেলা বাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।

আমতলী উপজেলা যুবলীগ নেতা রিপন মুন্সি বলেন, প্রকৌশলী রাকিব চৌধুরী রাজু আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি অল্প দিনের মধ্যেই বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। তিনি গোপনে সময় নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে সামাজিক কর্মকান্ডের আদলে জামায়াত ও শিবিরকে সু-সংগঠিত করতে মাঠে নেমেছেন। বর্তমানে তার জামায়াতি কর্মকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কনসার্টের আয়োজন করেছে। তার অর্থের উৎস ও কর্মকান্ড খতিয়ে দেখে প্রশাসনকে কার্যকারী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। তিনি আরো বলেন এ কনসার্ট বন্ধের জন্য আমি বরগুনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছি। আবেদনের প্রেক্ষিতে কনসার্ট বন্ধ করে দিয়েছেন প্রশাসন।

উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, রাজুর আচারন আচরন জামায়াত-শিবিরের। তার কর্মকান্ড খতিয়ে দেখে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।

এ বিষয়ে জামায়াত নেতা সময় সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের চেয়ারম্যান রাকিব চৌধুরী রাজু কনসার্ট বন্ধের কথা স্বীকার করে বলেন, ইনডোরে কনসার্ট করতে অনুমতি রয়েছে। তবে তিনি জামায়াত- শিবিরের কর্মকান্ডের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, প্রকৌশলী রাকিব চৌধুরী রাজুর জামায়াত-শিবিরের সাথে জড়িতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষায় কনসার্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, প্রকৌশলী রাজিব চৌধুরী রাজু জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি কিছু হাইব্রীড আওয়ামীলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

(এন/এসপি/জানুয়ারি ০৭, ২০২১)