নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়ায় দেড় লাখ টাকায় কলেজ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা মিমাংসা করেছে একই কলেজের শিক্ষকরা। অত্যন্ত গোপনে অভিযুক্তকে লঘু শাস্তি আর দেড় লাখ টাকা জড়িমানা করে এমন ঘটনা ধাপাচাপা দেবার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসি। ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

স্থানীয়রা জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর দ্বাদশ শ্রেণীর এক কলেজ ছাত্রী তার চাচাতো বোনকে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি করাতে সিংড়া উপজেলার হাতিয়ান্দহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যায়। ভর্তির কাগজপত্র জমা দেবার পর অফিস সহকারী রেজাউল করিম কৌশলে কলেজ ছাত্রীকে পাশের রুমে ওজন মাপার কথা বলে নিয়ে যায়। পরে কেউ না থাকার সুযোগে তাকে জাপটে ধরে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন নিপীড়ন করে অফিস সহকারী রেজাউল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মেয়েটি নিজেকে ছাড়িয়ে ছোটবোনকে নিয়ে বাড়িতে এসে ঘটনাটি পরিবারকে জানায়। পরে মেয়েটির পরিবারের লোকজন শিক্ষা ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনকে ঘটনাটি জানায়। তখন থেকেই অধ্যক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেন।

তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসে সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা। তারই অংশ হিসাবে ২৯ ডিসেম্বর কলেজের এক রুমে অভিযুক্ত রেজাউলকে চড় থাপ্পর আর পা ধরে মাফ চাওয়ানো হয়। জড়িমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা। ভুক্তভোগীর ছাত্রীটির বাবা জানায়, এসময় কলেজ অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শেরকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম, স্কুল ও কলেজ কমিটির সভাপতি ভেটু চৌধুরী, ডাঃ সামাদ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও হাসান আলী।

পরে ৪ জানুয়ারি জড়িমানার দেড় লাখ টাকা জনতা ব্যাংকের হাতিয়ান্দহ শাখার মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও তার চাচাত বোনের মায়ের এ্যাকাউন্টে জমা দেয় অফিস সহকারী রেজাউল। তবে এনিয়ে অফিস সহকারী রেজাউলের মুখোমুখি হলে সব অস্বীকার করে সে। রেজাউল করিম জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। দেড় লাখ টাকা জড়িমানার কথা বলা হলে সংবাদকর্মীর উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অযথাই কি সব কথা বলেন? এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। বলেই সটকে পড়ে সে।

তবে ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করেন অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রীটিকে যৌন নিপীড়নের সত্যতা পেয়ে ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ও সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহাকে নিয়ে সমঝোতা করে দিয়েছি। দেড় লাখ টাকা ভুক্তভোগী পরিবারকে দিয়েছি। ফৌজদারি অপরাধ মিমাংসা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে মেয়েটির নানা ঝামেলা হতো। তাই মিমাংসার উদ্যোগ নিয়েছি।

সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, সেদিন আমি কলেজে ছিলাম। তবে মিমাংসায় ছিলাম না। আর মিমাংসা হলেও ক্ষতি কি?

হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুব-উল-আলম জানান, কলেজের অধ্যক্ষ সহ কিছু ব্যক্তি তাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। ঘটনাটি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। তিনি যতটুকু শুনেছেন সে অনুযায়ী এ ধরনের বিচার করা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

পুলিশ সুপার সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, খুব গোপনে বিষয়টি আপস মিমাংসা করা হয়েছে। যা মিমাংসা করার কোনই সুযোগ নেই। ঘটনাটি জানার পর পরই বুধবার রাতে অভিযুক্ত রেজাউলকে আটক করা হয়। রাতেই তার নামে ভুক্তভোগী তরুণী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। পরে অভিযুক্ত রেজাউলকে আদালতের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যৌন নিপীড়নের ঘটনা আপস মিমাংসাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ জানান, ঘটনা অবগত হবার পরপরই অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। তিনি আপস মিমাংসার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। যারা যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা টাকার দিয়ে আপোস মিমাংসা করেছিল সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কতর্ৃপক্ষকে জানানো হবে।

(এডিকে/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০২১)