স্টাফ রিপোর্টার : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের প্রথম জানাজা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় জানাজা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিমকোর্ট বার) প্রাঙ্গণে মিজানুর রহমান খানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে ১২টার দিকে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সুপ্রিমকোর্টে জানাজায় বিচারপতি, আইনজীবী ও সাংবাদিকেরা অংশ নেন। এছাড়া অন্যান্য জানাজায় সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় সুপ্রিম কোর্ট বার এবং আইন, আদালত ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

জানাজায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মো. মোমতাজ উদ্দিম ফকিরসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।

জানাজা শেষে মিজানুর রহমান রহমান খানের মরদেহে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের পক্ষে থেকে সংগঠনটির সভাপতি মাসহুদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

মিজানুর রহমান খানের ছোট ভাই মশিউর রহমান খান জানান, পরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে তার ভাইয়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণের জানাজা শেষে মিজানুর রহমান খানের মরদেহ কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে নেয়া হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। মিজানুর রহমান খানকে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিজানুর রহমান খান মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি মা, স্ত্রী, তিন সন্তান, পাঁচ ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মিজানুর রহমান খান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার নমুনা পরীক্ষায় গত ২ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি ৫ ডিসেম্বর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক সমস্যা বাড়লে সেখান থেকে ১০ ডিসেম্বর তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানাচ্ছেন।

দীর্ঘ তিন দশকের সাংবাদিকতা পেশায় আইন, সংবিধান বিষয়ে লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় মিজানুর রহমান খান ছিলেন পথিকৃৎ।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ, ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল ও মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড।

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ১৯৬৭ সালের ৩১ অক্টোবর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির নলছিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ১৯৮৮ সালে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতায় থাকা মিজানুর রহমান খান ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত যুগান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা ও সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এরপর সমকালে উপ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। প্রথম আলোয় যোগ দেন ২০০৫ সালের ১ নভেম্বর।

মিজানুর রহমান খানের দুই ভাইও সাংবাদিক। তারা হলেন সিদ্দিকুর রহমান খান ও মশিউর রহমান খান। মশিউর রহমান খান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২১)