ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ডক্টর’স প্রাইভেট হাপাতালের মালিক ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি ও কালীগঞ্জ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন ছোট বড় সকল প্রকার অপারেশন। এমনটাই অভিযোগ ক্লিনিক মালিক সমিতির। 

তারা জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর-২০ তারিখে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন কার্যালয় (স্মারক নং সিএসঝি/শা-৬/২০২০) থেকে একটি নির্দেশনার পত্র ঝিনাইদহের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা, প্রাইভেট হাসপাতাল/ ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি এবং জেলার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, আপনার নিয়ন্ত্রনাধীন যে সমস্থ বে-সরকারি হাসপাতাল বিদ্যমান আছে সেই সকল প্রতিষ্ঠানের অপারেশনের ক্ষেত্রে এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে রেজিষ্টার চিকিৎসক ব্যতীত নার্স, আয়া, সেকমো, ওয়ার্ড বয় সহ অন্য কারোর অংশগ্রহন কোন ভাবেই অনুমোদিত নয় মর্মে অবহিত করেন।

এ পত্রে আরো উল্লেখ করেন, বর্ণিত সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি রোগীর অস্ত্রপাচারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মনীতি অবলম্বন করতে হবে। যদি কোন প্রতিষ্ঠান এসব বিধি অনুসরন না করে অস্ত্রপাচারে লিপ্ত হয় এবং যদি সত্যতা পাওয়া যায় সংগে সংগে স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়। এ সকল নিয়ম ভঙ্গের কোন সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল সহ সেই সকল প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ব্যাপরে কালীগঞ্জ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল হক বলেন, আমরা সিভিল সার্জন অফিস থেকে এমন একটি নির্দেশনার পত্র পাওয়ার পর আমি গত রবিবার (৯ জানুয়ারী-২০) সন্ধ্যায় সমিতির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি মিটিং করি এবং সেই মিটিংয়ে ডক্টর’স প্রাইভেট হাসপাতালের পক্ষ থেকে ম্যানেজার লিটনও উপস্থিত ছিলেন। ঐ মিটিংয়ে সকল ক্লিনিক মালিক/পরিচালকদের বলা হয় পত্রের সকল নির্দেশনা মেনে অপারেশনের মতো কার্যক্রম যেন পরিচালনা করা হয়। যদি কোন প্রতিষ্ঠান মালিক এসকল নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে সরকারি ব্যবস্থার পাশাপশি সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সেই প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এবং তাতে সবাই সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু ডক্টর’স প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক এসকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার সময় ডাক্তার কামরুন্নহার এনেসথেটিক (অজ্ঞান ডাক্তার) ছাড়াই, নন ডিপ্লোমা নার্স বিনাকে দিয়ে ক্যালিপসল ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ৩ টি সিজারিয়ান ও একটি ওভারিয়ান টিউমার অপারেশন করেন। তাতে এ্যসিস্ট করেন তার ছেলে ডাক্তার অয়ন সিদ্দিকী, নন ডিপ্লোমা নার্স বিনা, ম্যানেজার লিটন ও আয়া পাপিয়া খাতুন। যেটা সরকারি নিয়ম পরিপন্থি।

খবর পেয়ে আমরা সমিতির সবাই সেখানে যেয়ে এসব সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সিজার অপারেশনের কারণ জানতে চাইলে ডা: আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি সিভিল সার্জন অফিস থেকে এমন কোন নির্দেশনা পায়নি। আর কোথায় লেখা আছে যে অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া অপারেশন করা যাবে না? আমার ওয়াইফ ডাক্তার, আমার ছেলে ডাক্তার আমরা অপারেশন করতে পারবো না? আমি কোথাও পায়নি যে অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া সিজার সহ অন্যান্য অপারেশন করা যাবে না, আমি এসব নিয়ম মানি না।

ফিরোজুল হক ফিরোজ আরো বলেন, এর আগেও ডক্টর’স প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডা: আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি নির্দেশনার এবং সমিতির কোন নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। ডাক্তার কামরুন্নাহার কোন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তার নিজের প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করে যাচ্ছে। এ কারণে আমি সমিতির পক্ষ থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সকল প্রকার নিয়ম ভঙ্গ করছেন মর্মে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট উক্ত বিষয়াদি তদন্তপূর্বক ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেছি।

এ ব্যাপারে ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি এ ধরনের কোন নির্দেশনা পায়নি যে, অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া অপারেশন করা যাবে না। আর এতো অজ্ঞান ডাক্তার কোথায় পাবো। আমার ওয়াইফ ডাক্তার কামরুন্নাহার অপারেশন করেছে, এ্যাসিষ্ট করছে আমার ছেলে ডাক্তার অয়ন সিদ্দিকী, নার্স বিনা ৩ টা রুগীর অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়েছে। কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরেও তো সবাই অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়াই অপারেশন করে যাচ্ছে তাদের তো কোন সমস্যা নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামিমা শিরীন লুবনা বলেন, অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া অপারেশন করার কোন নিয়ম অনেক আগে থেকেই নেই। আমিও বার বার উপজেলার সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক মালিক ও মালিক সমিতির সভাপতিকে অবহিত করেছি।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২১)