আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মতলুবর রহমান নারিকেল গাছ মার্কায় ১২ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে স্বতন্ত্র মো. আনওয়ার-উল-সরওয়ার (রেল ইঞ্জিন) প্রতিকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯ শত ৭০ ভোট । আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন পেয়েছেন ৭ হাজার ৩ শত ১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এ নির্বাচনে গাইবান্ধা পৌরসভায় মেয়র পদে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন। অপরদিকে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পাটি মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রশিদ ডাবলু বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ২৭ শত ৪ টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী হিসাবে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ২৫ শত ৫৮ ভোট। সুন্দরগঞ্জে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন।

দিনব্যাপী শান্তিপূর্নভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হলেও ভোট শেষে ভোট কেন্দ্রে ভোট গণনা না করতে চাওয়ায় গাইবান্ধা পৌর নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কোমরনই কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি আটকে দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে আইন শৃংখলা বাহিনী সদস্যগণ। এসময় একটি সরকারি গাড়িতে আগুন ও তিনটি গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে গাইবান্ধা নির্বাচন অফিসে ব্যালট পেপার নিয়ে যেতে চায় প্রশাসন। পরে অনেক অনুরোধ করা হলেও তারা কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করতে চায়নি। এরই একপর্যায়ে ব্যালট পেপার নিয়ে যেতে চাইলে এলাকাবাসী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সারাদেশের ন্যায় দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচন ২০২১ এ গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয় আজ ১৬ জানুয়ারী শনিবার। সকাল থেকে একটানা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভাবে এ দুই পৌরসভার ভোট গ্রহন নারী পুরুষ ভোটারগণ সুশৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেছেন । ভোট উৎসবে নানা উত্তেজনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও অবশেষে শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোট গ্রহন শেষ হয়। এরপর শুরু হয় ভোট গণনার। ভোট গণনা শেষে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। এ দুটি পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ৬৫ হাজার ৪৫৮ জন নারী পুরুষ ভোটার । নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ পার্সেন্ট ।

এর মধ্যে গাইবান্ধা পৌরসভায় ৯ টি ওয়ার্ডে ৩১ টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫১ হাজার ৩শ’ ৮৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৪ হাজার ৫শ’ ৫৯০ জন এবং নারী ভোটার ২৬ হাজার ৭শ’ ৯৭ জন। এ নির্বাচনে ৮ জন মেয়র পদে ,১৭ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ও ৪১ জন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মতলুবর রহমান পেয়েছেন ১২ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে স্বতন্ত্র মো. আনওয়ার-উল-সরওয়ার (রেল ইঞ্জিন) প্রতিকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯ শত ৭০ ভোট । আর আওয়ামীলীগ মনোনীত এ্যাড. শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন (নৌকা) প্রতিকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৩ শত ১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন, বিএনপি থেকে মো. শহিদুজ্জামান শহীদ (ধানের শীষ) প্রতিকে পেয়েছেন ৯ শত ১৮ ভোট , মো. শামছুল আলম (মোবাইল ফোন) প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৬ শত ৬৯ ভোট, মো. আহসানুল করিম (চামুচ) প্রতিকে ভোট পেয়েছেন এক হাজার ৯ শত ৭০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মির্জা হাসান (জগ) প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ৩ শত ৭৩ ভোট,এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমেদ (ক্যারাম বোর্ড) প্রতীকে এক হাজার ৬ শত ৯২ ভোট। এর আগে পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অংশ নেওয়ায় আওয়ামীলীগ থেকে আহসানুল করিম, ফারুক আহমেদ ও মতলুবর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা য়ায়।

অপরদিকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন লাঙ্গল মার্কার জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুর রশিদ ডাবলু তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ২৭০৪ টি। তার নিকটতমপ্রতিদ্বন্দি প্রার্থী হিসাবে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ২৫ শত ৫৮ ভোট। মোট ৭ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তাঁরা হলেন- বিএনপি থেকে, এনডিপির আহসান হাবীব মাসুদ (সিংহ) তিনি পেয়েছেন ২৫ শত ৩০ ভোট, স্বতন্ত্র খয়বর হোসেন মওলা (নারিকেল গাছ) তিনি পেয়েছেন ২৫ শত ৪০ ভোট, স্বতন্ত্র দেবাশীষ কুমার সাহা (মোবাইল) তিনি পেয়েছেন ৯ শত ৩৪ ভোট, মশিউর রহমান সবুজ (ধানের শীষ) তিনি ভোট পেয়েছেন ২০০ টি ,স্বতন্ত্র আল শাহাদাত জিকো (জগ) ৪২ ভোট। এ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় খয়বর হোসেন মওলা ও দেবাশীষ কুমার সাহা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাদেরকে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া এ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১৪ হাজার ৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৮৬৩ জন এবং নারী ভোটার ৭ হাজার ২০৮ জন।

এ দুটি পৌরসভা গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য বিশেষ নজরদারি রাখা হয়। এছাড়া মাঠে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সাার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেন।’

এদিকে দিনব্যাপী ভোট গ্রহন শান্তিপূর্ণ করতে কেন্দ্র গুলোতে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের পাশাপাশি পুলিশ ও আনছার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন । এর পাশাপাশি ডিবি পুলিশ, র‌্যাব, ও বিজিবি সদস্যদের টহল জোড়দার করা হয়েছিলো । নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে গত ১৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেলসহ বেবি টেক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, টেক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সকল ধরনের ইঞ্জনচালিত যান চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। দিন ব্যাপী শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভোট গণনা মধ্য দিয়ে ভোটের সব কয়টি কেন্দ্রের ফলাফল একত্রিত করে বেসরকারি ভাবে জেলার ২ টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন।

নির্বাচনে ভোট শান্তিপূর্ন ভাবে অনুষ্ঠানে ভোট কেন্দ্র গুলো পরির্দশন করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন,জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল মোত্তালিব, র‌্যাব ১৩ গাইবান্ধা কোম্পানি কমান্ডার মুন্না বিশ^াস । এছাড়াও জেলার আইন শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনী সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করেন।

(এ/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২১)