আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মস্কোয় ফেরামাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক এবং দেশটির অন্যতম বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর বার্লিন থেকে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আসার পরপরই স্থানীয় সময় রবিবার (১৭ জানুয়ারি) ৪৪ বছর বয়সী নাভালনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিবিসি জানিয়েছে, নাভালনি দেশে ফিরছেন-এমন খবর পেয়ে আগেই মস্কো বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক তাকে সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। তবে কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে বহনকারী বিমানটি মস্কোতে না অবতরণ করিয়ে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। সেখানে অবতরণ করার পরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

নাভালনিকে গ্রেফতারের সমালোচনা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি। তারা দ্রুত নাভালনিকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

এ ছাড়া নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া জেক সুলিভান নাভালিনের গ্রেফতারের সামলোচনা জানিয়ে বলেন, ‘নাভালিনের ওপর ক্রেমলিনের আক্রমণ শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয় বরং যেসব রুশ নাগরিক কণ্ঠ জোরদার করতে চান তাদের জন্য আঘাত।’

এদিকে গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে নাভালনি গণমাধ্যম ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি জানি আমি ঠিক কাজ করেছি। আমি কোনোকিছুতে ভয় পাই না।’ এরপর সীমান্তরক্ষীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী আমার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন?’

নাভালনির সঙ্গে তার স্ত্রীও জার্মানি থেকে ফিরেছেন। তবে গ্রেফতারের সময় তাকে সরে যেতে বলা হয়। এ ছাড়া আবেদন করার পরও তার আইনজীবীকেও সঙ্গে যেতে দেয়া হয়নি। এরপর তাকে মস্কোর একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ২০ আগস্ট সাইবেরিয়া থেকে মস্কোগামী একটি বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আলেক্সেই নাভালনি। সাইবেরিয়ার টমস্ক বিমানবন্দরে চায়ের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার সমর্থকরা।

রাশিয়ার এই বিরোধী নেতার মুখপাত্র সেসময় জানান, তাদের ধারণা, চায়ের কাপেই বিষ মেশানো হয়েছিল। কারণ বিমানে ওঠার পর অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত তিনি ওই চা ছাড়া আর কোনও খাবার গ্রহণ করেননি।

অসুস্থ হওয়ার পরপরই রাশিয়ার যে হাসপাতালটি নাভালনিকে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানকার চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছিলেন, তার রক্তে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই সুর বদলে তারা বলা শুরু করেন, ওই ধরনের কোনও রাসায়নিক তার রক্তে নেই।

তখন নাভালনির স্ত্রী অভিযোগ করেন, রাশিয়ায় তার স্বামীর সুচিকিৎসা হবে না। এজন্য তিনি নাভালনিকে বিদেশে নিয়ে যেতে চান। তখন চিকিৎসকরা বাধা দিয়ে বলেন, এ অবস্থায় বিদেশে নেয়ার চেষ্টা করলে তিনি যাত্রাপথেই মারা যেতে পারেন।

পরে পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু নেতা পুতিনকে ফোন করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে ছাড়পত্র দেয় এবং তাকে দ্রুত জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কমর্কতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণার জন্য ৪৪ বছর বয়সী আলেক্সেই নাভালনি বেশ পরিচিত। এর আগেও বিষপ্রয়োগের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২১)