মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : বয়স হয়েছে এখন আর কাজ করতে মন চায় না। কিন্তু কি করবো? ৪ শতাংশ বসত ভিটে ছাড়া কোনো জমিও নেই। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা উপার্জন করি তা দিয়েই কোনো রকম সংসার চলছে। কাজে না গেলে স্ত্রী সন্তান না খেয়ে থাকবে। আল্লাহ আমায় ৬ ছেলে মেয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার ৪ জন কথা বলতে পারে না। সন্তান মা বাবার কাছে আদরের তাই কষ্ট করে হলেও কোনো রকম ভাবে ২ বেলা খাওয়াইতে হয়।

সোমবার সরজমিনে গেলে মদন উপজেলা তিয়শ্রী ইউনিয়ের কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত চান্দু মিয়ার ছেলে দিনমজুর আবুল মিয়া(৫০)কান্না জড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন।

স্ত্রী ও ৬ সন্তান নিয়ে আবুল মিয়ার সংসার। এর মধ্যে ৪ সন্তান বাক-প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে দিদারুল ইসলাম (১৫) বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না কিন্তু সংসার চালাতে বাবার হিমশিম খেতে হয়। তাই বাবার সাথে সাথেই অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যায়। বড় মেয়ে স্বর্না মনি (১৩) সেও বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে না পারলেও ঘরে মায়ের কাজে সহযোগীতা করে। লাকী আক্তার(৮) ও মোরসালিন(৩) বছর বয়সী তারাও বাক প্রতিবন্ধী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষ্ণপুর গ্রামের কয়েকজন জানান,সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতার সু-ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও একটি দিনমজুর পরিবারের ৪ জন বাক প্রতিবন্ধী সন্তান থাকার পরেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি এখনো কোনো সরকারি ভাতা। বর্তমানে পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে । দ্রুত তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

কৃষ্ণপুর গ্রামের আবুল মিয়ার বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন জানান, আল্লাহ আমাদের ৬ জন সন্তান দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন কথা বলতে পারে না। শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা দেয়। আমাদের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত কোনো রকম সরকারি ভাতা বা সাহায্য জোটেনি। আমাদের জন্য কি সরকার কোনো ভাতা দিবে না?

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন জানান,ওই পরিবারে ৪জন প্রতিবন্ধী আছে। আমি একটি মেয়েকে ভাতার জন্য তালিকায় নাম দিয়েছি। আমার সময়ের মধ্যে বরাদ্দ পেলে বাকিদেরকেও দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ জানান, কৃষ্ণপুর গ্রামের দিনমজুর আবুল মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে একজন আবেদন করেছিল। স্বর্না মনির নামের একজনের নাম দেয়া হয়েছে। অচিরেই তার কার্ডের ভাতাটি পাবে। ওই পরিবারে অন্য সদস্যও যে বাক প্রতিবন্ধী এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ জামাল আহম্মেদ জানান, একই পরিবারের চার প্রতিবন্ধীর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে আবেদন করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, বাক প্রতিবন্ধী পরিবারের খবর পেয়েছি। তাদের মধ্যে খাবার ও কম্বল দেয়ার ব্যবস্থা করছি। যারা ভাতার কার্ড পায়নি তাদের অচিরেই ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এম/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২১)