শিতাংশু গুহ


প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে বের হওয়া ভ্যাকসিন রবিবার ১৭ই জানুয়ারী তাঁর আমলেই নিলাম। আমার ভাগ্যে জুটেছে মর্ডানা’র টিকা। বুধবার ২০ জানুয়ারি ২০২১ প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেবো কমলা দেবী-বাইডেন আমলে। যাঁরা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্যে চিন্তায় অস্থির হয়েছিলেন, তাঁদের জানাচ্ছি, দুই প্রশাসনের আমলে ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেয়া সম্ভবত: ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা’র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত? এটাই আমেরিকান গণতন্ত্র। স্মর্তব্য যে, ট্রাম্পের আমলে ভ্যাকসিন বের হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। 

ভ্যাকসিন নিয়ে যাদের সংশয় আছে, তাঁদের বলছি, যেকোন ওষুধের কমবেশি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে, কিন্তু অপকারের চেয়ে উপকার বহুগুন বেশি হওয়ায় মানুষ ওষুধ খায়। তাই প্রথম সুযোগেই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাদের ভ্যাকসিন নেয়ার ছবি শেয়ার করেছেন, এর ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এতে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছেন। কারো কারো মতে এর নেতিবাচক দিন হচ্ছে, আপনি নিজের পাবলিসিটি’ করছেন? আমি জো বাইডেনের ভ্যাকসিন নেয়ার ছোট্ট ভিডিও-টি দেখেছি, তাঁর সম্ভবত: পাবলিসিটির প্রয়োজন ছিলোনা, তাঁর ভিডিও অনেককে উৎসাহিত করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম বাংলাদেশী অনেকে নাকি ক্যাটাগরিতে না পড়লেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। আমি গতকাল নিয়েছি ৬৫+ ক্যাটাগরিতে, আমার গিন্নি আলপনা গুহ আজ নিয়েছেন ‘শিক্ষা’ ক্যাটাগরিতে। শুক্রবার কল করে (৮৭৭-৮২৯-৪৬৯২) দু’জন দু’দিনে পেলাম। টিকা পেতে সাকুল্যে ৩০/৪০মিনিটি সময় লাগে, এরমধ্যে টিকার দেয়ার পর বাধ্যতামূলক পর্যবেক্ষণে থাকতে হয় ১৫মিনিট। কোন ঝামেলা নেই, আইডি-ইন্স্যুরেন্স কার্ড নিতে বললেও কেউ দেখেনি। খুব সুন্দর ব্যবস্থা। আমার কাছে মনে হয়েছে, এঁরা চাচ্ছে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে জলদি টিকা দেয়া যায়?

বাসায় ফিরে দেখি ই-মেইল এসে গেছে, টিকা দেয়ার জন্যে কংগ্র্যাচুলেশন, সাথে সমস্যা হলে কি কি করতে হবে তা? পরবর্তী ডোজের জন্যে এপয়েন্টমেন্টের লিংক সেখানে ছিলো, ঢুকলাম, ইন্স্যুরেন্স ইনফর্মেশন দিয়ে কিছুতেই ঢুকতে পারছিলাম না। টিকা ফ্রী, কোন ইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজন নেই, তাই ‘নো ইন্স্যুরেন্স’ টিক দিলাম, সব ঠিক হয়ে গেলো, তবে ইন্স্যুরেন্স কার্ডের উভয় দিক আপলোড করেছি। দ্বিতীয় ডোজ রোববার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। বা-হাতে একটু ব্যাথা, মাঝেমধ্যে একটু অস্বস্থি ব্যাতিত তেমন সমস্যা নেই, আজ সারাদিন ‘অফিস/কাজ’ করেছি, প্রতি সোমবার ‘কোভিড-১৯’ টেষ্ট করতে হয়, তাও করেছি, নেগেটিভ।

নরওয়ে-তে ফাইজারের ভ্যাকসিনে ২৯জন মারা গেছেন, এদের বেশির ভাগের বয়স ৮০/৯০? সুইডেনেও কিছু মানুষ মারা গেছেন। এনিয়ে খোদ নরওয়ে এবং সুইডেনে প্রশ্ন উঠেছে যে, এঁরা কি ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে মারা গেছেন, নাকি অন্য কারণে? সুইডেনে ময়না তদন্ত না করেই মৃত্যু’র কারণ ‘কোভিড’ লেখা হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমেরিকায় প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় ৬০ হাজার, হৃদরোগে এর ডবল মানুষ মারা যায়, কোভিড’র কারণে এখন ঐসব রোগ গৌণ হয়ে গেছে। ভারতের কুড়ি লক্ষ টিকা বুধবার (২০জানুয়ারি) বাংলাদেশ পৌঁছবে। এরমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে? আরে ভাই আপনি ভারতের টিকা নেবেন না ইংল্যান্ড বা চীনের টিকা নেবেন তা আপনার ব্যাপার, বিরোধিতা করেন কেন? ভাই, পাকিস্তানের তো টিকা নাই, তা-ই যেটা পান, সেটাই নিন, ‘জান বাঁচানো ফরজ’।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী, [email protected]