রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালি জাতীয় জীবনে একটি চেতনা ও অর্জনের নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন বাজি রেখে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়। যা মুক্তিযোদ্ধাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। 

মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীরত্ব গাঁথা সংগ্রামের ইতিহাস যেমন জাতিকে গর্বিত করে তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বঞ্চনা আর যথাযথ সম্মান না পাওয়ার বিষয়টিও ব্যথিত করে। এমনি এক ৭১’র রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। তিনি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার হেড়ন্ড পাড়া গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হতে শুনা যায় ৯ মাস যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ। সুযোগ সন্ধানি কিছু স্বার্থপর মানুষ যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্šÍভূক্ত হয়েছেন। তাই ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার হালনাগাদ হলেও মামা, চাচাদের তদবীর না থাকায় তালিকায় আসেনা না অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম। অবহেলা অযত্নে পরে থাকে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প।

তেমনি ৭১’র এক সম্মুখ যোদ্ধা আব্দুল জলিল। তাঁর বাড়ি দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের হেড়ন্ড পাড়া গ্রামে। আব্দুল জলিল স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের বাতেন বাহিনীতে কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্বা একে এম শাজাহান এর অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সনদপত্র লাভ করেন। তিনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও টাঙ্গাইলের নাগপুরের সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় নাম উঠে আসে তাঁর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে সাক্ষাতকার না দেয়ায় জলিল তালিকা থেকে বাদ পড়েন। দীর্ঘদিন যাবৎ অনেক চেষ্টা তদবীর করার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় তাঁর নাম লিপিবদ্ধ হয় ”খ”শ্রেনীর তালিকায়। প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও ‘ক’ এর স্থলে ‘খ’ তালিকায় নাম থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না তিনি। গায়ের মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে জানলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পাননি তিনি। যুদ্ধের স্মৃতিচারন করে জলিল এ প্রতিবেদক কে বলেন, আমি দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছি। পাক হানাদারের বুলেটের ভয় করিনি। ৫০ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাইনি। অনেক চেষ্টা তদবির করে আজ আমি ক্লান্ত। ভূগছি নানা রোগে। কবে ওপারে চলে যাব তার ঠিক নেই। মৃত্যুর আগে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাই এটাই আমার দাবি।

জীবিতবস্থায় বাতেন বাহিনীর প্রধান খন্দকার আব্দুল বাতেন, জলিলকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন প্রদান করেন।

এ বিষয়ে, দেলদুয়ার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবলু বলেন, আব্দুল জলিল একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক যাচাই-বাছাই পুর্বক তার নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২১)