আশজাদ রসুল সিরাজী, গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর শীর্ষ মাদক কারবারী বর্তমানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ মামলার ফেরারি আসামী মাহবুবুর রহমান ওরফে স্বপন (৩৫) পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। 

বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটায় টঙ্গী বাজার সংলগ্ন হোন্ডা রোডে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সে আত্মসমর্পণ করে। সে জীবনে আর কখনো মাদক কারবারে জড়াবে না বলে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সামনে পুলিশের কাছে অঙ্গীকার করেছে। স্বপন বর্তমানে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ মামলার ফেরারি আসামী। ইতিপূর্বে সে চার বার জেল খেটেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করায় জিএমপি পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।

এসময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আশ্রাফুল ইসলাম, টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম, স্বপনের মা রাশিদা বেগম এবং টঙ্গীর শীর্ষ মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত হাজী মাজার বস্তির বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

স্বপন সাংবাদিকদের জানায়, প্রথমে ২-৩ বছর সে দারুণভাবে মাদকাসক্ত ছিল। পরবর্তীতে মাদকের টাকা জোগার করতে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে টঙ্গীর শীর্ষ মাদক কারবারি বাচ্চুর সেকেন্ড ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো। প্রায় তিন বছর আগে বাচ্চু র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে মারা যাওয়ার পর স্বপন গা ঢাকা দেয়। স্বপন প্রায় ৩০টি মামলার আসামী হয়েও এতো দিন পালিয়ে থেকে মাদক বেচা-কেনা করতো।

সম্প্রতি আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় সে আরো কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে থাকা এই জীবনকে তার কাছে অভিশপ্ত মনে হচ্ছিল। তাই সে স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার মা ও এলাকার (হাজী মাজার বস্তির) মুরব্বীদের সাথে নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে সাক্ষাত করে এবং মাদক কারবার ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে কাউন্সিলরের সহযোগিতা চায়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, স্বপনের আগ্রহ দেখে আমি প্রশাসনে যোগাযোগ করি। আজকে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি একটি ভাল কাজ করেছি। এলাকায় আরো যারা মাদক কারবারি আছেন তাদেরকে আহ্বান করবো এই অন্ধকার জগত ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য।

জিএমপি টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে আমরা স্বপনকে সহযোগিতা করছি মাত্র। কর্মসংস্থানসহ তাকে আমরা সব ধরণের সহযোগিতা দেব। আরো যারা মাদক কারবারে জড়িত তাদেরকেও আহ্বান করছি; স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য। তিনি বলেন, আমরা আজ স্বপনকে আদালতে সোপর্দ করবো। জামিনে বেরিয়ে এসে যাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে করতে পারে সেজন্য তাকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

স্বপনের মা রাশিদা বেগম জানান, তাদের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার ফুলগারচর গ্রামে হলেও জন্মের পর থেকে স্বপন টঙ্গীর হাজী মাজার বস্তিতে বড় হয়েছে। রাশিদা ও তার স্বামী (স্বপনের বাবা) মরহুম আব্বাস আলী সাবেক টঙ্গী পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মী ছিলেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে স্বপন সবার বড়।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২১)