স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ লক্ষ্যারচর এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন জসু’র পিতা মোঃ এছহাক মিয়াকে রাজাকার আখ্যা দেয়ার ঘটনায় মদনগঞ্জসহ গোটা বন্দর এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি মুনতাসির মামুনের লেখা একটি বইয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এছহাক মিয়ার নাম উল্লেখ করা নিয়ে এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ  ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করছে।

এদিকে এ বিষয়ে ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শণে ও মুঠোফোনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা জালালউদ্দিন জালু জানান, মদনগঞ্জে কোন মুক্তিযাদ্ধার বাবা রাজাকার ছিল এটা আমরা কখনো শুনিনি এখনো জানিনা এইরকম কোন খবর। একাত্তুরের যুদ্ধের সময় সে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাড়িয়েছেন।

এছহাক মিয়ার রাজাকার ছিলেন কি না জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ বলেন, এছহাক মিয়া সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানিনা। মুনতাসির মামুনের বইয়ের মধ্যে তার নামটা এসেছে এটা দুঃখজনক,খুবই দুঃখজনক। আমি সেটা পড়েছি এইটুকুই জানি তবে আমার জানা মতে সরকারিভাবে এখনো রাজাকারদের চুড়ান্ত কোন তালিকা হয়নি।

বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী নাছির জানান, মদনগঞ্জে কোন মুক্তিযোদ্ধার বাবা রাজাকার ছিলেন এ ধরণের কোন তথ্য আমাদের জানা নেই তবে হ্যা একজন মুক্তিযোদ্ধার ভাইয়ের নামে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে এইটুকুই বলতে পারি। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা সম্ভাব্য রাজাকারদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে এনএসআইয়ের মাধ্যমে জমা দিয়েছি সেটা তারা তদন্তপূর্বক সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করবেন।

মদনগঞ্জের যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাবুদ্দিন কমান্ডার জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে আমরা সম্মুখ যুদ্ধ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম মদনগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এছহাক মিয়া শান্তি কমিটিতে যুক্ত ছিলেন কি না তা আমার জানা নেই, বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাহার উদ্দিন বলেন, এছহাক মিয়া কোন রাজাকার ছিলেন না বরং উনি ছিলেন সমাজ সেবক। আমার দেখা মতে মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তিনি যুদ্ধে যেতে না পারলেও তার ছেলে কুতুবউদ্দিনকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন।

মাহমুদনগর এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব জানান, বীরমুক্তিযোদ্ধা কুতুবউদ্দিনের বাবা কোনদিনইও রাজাকার ছিলেন না এটা আমরা কখনো শুনিনি। তার বাবা রাজাকার হয়ে থাকলে সেটা আমরাও জানতাম। তাদেরকে আমরা ভাল করেই চিনি।

বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন খান বলেন, এছহাক মিয়া এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি ছিলেন খুব ভাল মানুষ ছিলেন যারা ওনাকে রাজাকার বলেন তারা নিজেরাই রাজাকার। ওনাকে কখনোই দেখিনি দেশের বিপক্ষে কোন ভূমিকা রাখতে। ওনাকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে যারাই বিবৃত্তি দিয়েছে তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই অপপ্রচার করছে সমাজে তাদের সম্মান নস্ট করার জন্য।

মদনগঞ্জ লক্ষ্যারচর ৩তলা জামে মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জসিমউদ্দিন খান বলেন, এছহাক মিয়া নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ ছিলেন। আমরা ওনাকে বাওয়া জুট মিলের একজন ঠিকাদার হিসেবে জানি। তাদের পরিবার থেকে হাজী ইব্রাহিম আলমচান মডেল স্কুল এন্ড কলেজের জন্য জায়গা দিয়েছেন।

মদনগঞ্জ পায়রা চত্ত্বর এলাকার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অফিসার হাজী হাবিবুর রহমান জানান, এছহাক সাহেবকে আমি ব্যাক্তিগতভাবেই চিনি। পত্রিকায় যে তথ্য প্রচার হয়েছে সেটার কোন ভিত্তি নেই। যতদূর জানি, এছহাক সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। হয়তোবা কেউ শত্রুতাবশতঃ তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেন পান্ডব জানান, এছহাক মিয়াকে আমি খুব ভাল করেই চিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশের বিরোধীতাতো করেননি বরং আরো সহায়তা করেছেন। এছহাক মিয়া এলাকার ন্যায় বিচার করতেন। শত্রুতা করে তার ছেলে জসুকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়ের করার জন্যই এই বদনাম করছে। এছহাক মিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিজে খাওয়া দাওয়া করাতেন এবং তার ছেলে কুতুবউদ্দিনকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন।

মদনগঞ্জ এলসি রোডের বাসিন্দা ঐতিহ্যবাহী মদনগঞ্জ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক কর্মকর্তা সমাজ সেবক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এছহাক সাহেব রাজাকার ছিলেন না এটা সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। এছহাক মিয়া ভাল লোক ছিলেন কিছু আজে বাজে লোক এছহাক মিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানাভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

অপরাপর সমাজ সেবক দলিলউদ্দিন বলেন, এছহাক দেশের বিরোধীতা করার প্রশ্নই ওঠেনা। আমরা কোনদিনই তার বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ পাইনি কিংবা দেশ বিরোধী কর্মকান্ড চোখেও পড়েনি। এটা সম্পূর্ণরূপে শত্রুতামি।

শান্তিনগর পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির সভাপতি হাজী কফিলউদ্দিন জানান, এছহাক মিয়ার মতো লোকই হয়না। তিনি রাজাকার হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। তার পরিবার সব সময় স্বাধীনতা পক্ষে কাজ করেন।

লক্ষ্যাচর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, একাত্তুরের যুদ্ধ আমি দেখেছি। কারা কারা মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকার তাদেরকে আমরা ভাল করেই চিনি। মফিজ সাহেব, আইয়ূব আলী ভাই এবং কুতুবউদ্দিন ভাইকে দেখেছি যুদ্ধ করতে। আর কুতুবউদ্দিন ভাইয়ের বাবা এছহাক মিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে দেখেছি। বর্তমানে তার ছেলেরাও অনেক ভাল তাদের গোটা পরিবারই ভাল তাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অপবাদ মোটেই ঠিকনা।

(জিআর/এসপি/জানুয়ারি ৩১, ২০২১)