টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার চামুরিয়া দক্ষিপাড়া গ্রামে মালিককানা দ্বন্দে বন্ধ রয়েছে সেচ পাম্প। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের চারা রোপন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে ১৫০ বিঘা আবাদি জমির কৃষকেরা। দফায় দফায় সমাধানের চেষ্টা করলেও এ পর্যন্ত চালু হয়নি ওই সেচ পাম্প। দ্রুত সমাধান করে পাম্পটি চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে মেহেদী হাসান, মতিউর রহমান খান ও আব্দুল হামিদ খান যৌথভাবে ওই সেচ পাম্পটি চালু করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে অর্ধেক শেয়ার খন্দকার নাসির উদ্দিন, খন্দকার কামাল হোসেন ও খন্দকার হোসেন আলীর কাছে বিক্রি করেন। নাসিরের নেতৃত্বে পাম্পটি পরিচালনা হতে থাকে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত নাসিরের নেতৃত্বেই পাম্পটি পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছ থেকে ওই গ্রামের তজিম উদ্দিন, আব্দুল করিম, খন্দকার কামাল, খন্দকার হোসেন আলী, মো. ফজলু, মো. রোকনুজ্জামান, মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. মিজানুর রহমানের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে নেন। রেজিষ্ট্রেশনের পর তাদের মধ্যে খন্দকার কামাল, হোসেন আলী ও রোকনুজ্জামানকে বাদ দিয়ে দেন।

এ ছাড়াও আনোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। তজিম উদ্দিন, মিজানুর রহমান আ. করিম ও ফজলু ভোগ দখল করতে থাকে। ২০১০ সালেই নাসির উদ্দিন মালিকানার দাবিতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রায় ১১ বছর চলার পর চলতি বছরের গত ৩ জানুয়ারি আদালত নাসির উদ্দিনের পক্ষে রায় দেন। নাসির পাম্প চালাতে গেলে প্রতিপক্ষরা তাকে বের করে দিয়ে মেশিন ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। বর্তমানে ওই পাম্পটি বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে তমিজ উদ্দিনরা আদালতে আপিল করেছেন।

কৃষক ফজলু মিয়া, হামিদ মন্ডল ও তুলা প্রামানিক বলেন, ‘আশে পাশের গ্রামের ধানের চারা লাগানোর পর ক্ষেত সবুজ হয়েছে। আজও পর্যন্ত আমরা ধানের চারা লাগাতে পারলাম না। মালিকদের দ্বন্দে আমরা বিপাকে পরেছি। আমরা দ্রুত সমাধান চাই। আমাদের জমি চাষ করতে চাই।’

ওসমান মিয়া, জুরান আলী ও কুদরত আলী নামের অপর কৃষকেরা বলেন, ‘ধানের চারা লাগানোর পর পানির অভাবে ধান গাছ মরতে শুরু করেছে। মালিকদের মালিকানা সমস্যার কারণে আমরা ধান চাষ নিয়ে বিপদের মধ্যে আছি। এবার বোরো মৌসুমের ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর প্রতিপক্ষরা লাঠির জোড়ে জোড় পূর্বক ভোগ দখল করে খেয়েছে। আদালত আমাকে রায় দেওয়ার পরও আমি মেশিন চালাতে পারছি না। এতে কৃষকেরা খুব বিপাকে পড়েছে। আশেপাশের এলাকায় ১৫ দিন আগে চারা লাগানো শেষ হয়েছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান চাই।’

তজিম উদ্দিন বলেন, ‘১৫০ বিঘার মধ্যে ৫০ বিঘার মতো জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে। পানির অভাবে সেগুলো মরতে শুরু করেছে। একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করেও সমাধান সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যান মেশিন চালানোর দায়িত্ব নিলেও তা চালু করা হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছে ১৫০ বিঘা জমির কৃষকেরা। আমি এর দ্রুত সমাধান চাই।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বালার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ফারহানা মামুন বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা তানজীন অন্তরা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকায় লোক পাঠিয়েছিলাম। উভয় পক্ষকে ডেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।’

(আরকেপি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১)