তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : জামায়াত নেতা হাফিজুল ইসলাম ২০০৮ সনের ১৭ মার্চ বার কাউন্সিলের ৫০১নং সনদে তালিকাভুক্ত হয়ে একই বছরের ৩ এপ্রিলে যোগদান করেন হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতিতে। এরপর থেকে একের পর এক সমালোচনায় আসেন তিনি। হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাশকতা, রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকালাপ, প্রতারণা, চুরি-ছিনতাই এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তিনি একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের অভিযানে জামায়াত নেতা হাফিজুল ইসলামের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের বই, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোজাহিদ এর মুক্তি বিষয়ক বই, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের অক্ষয় বিনাশী চটি বই, নাশকতা ও জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি মূলক প্রচারপত্র ইত্যাদি।

শুধু রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকালাপই নয়, হাফিজুল ইসলাম তথ্য গোপন করে নবীগঞ্জ উপজেলার দিনার পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এমপিওভূক্ত শিক্ষক হিসাবে থাকা অবস্থায় তিনি হবিগঞ্জ জেলা বারের সদস্যপদ লাভ করেন। যদিও বার কাউন্সিল ও হবিগঞ্জ জেলা বারের বিধান অনুযায়ী এডভোকেট হিসাবে তালিকাভূক্তির পর কোনো সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার বিধান নেই।

হাফিজুল ইসলাম লাখাই উপজেলার সিংহ গ্রামের চৌকিদার বাড়ীর মৃত মিজাজ আলীর পুত্র। পারিবারিক ভাবে তিনি সবার ছোট। তার আরেক ভাই আলী রাজা স্থানীয় বাজারের শান্তশিষ্ট ব্যবসায়ী হলেও হাফিজুল ইসলাম হবিগঞ্জ জেলা বারের সদস্য হবার সুবাদে নির্ধিদায় চালিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক অপকর্ম। আদালত পাড়ায় বিচারপ্রার্থীদের সাথে অসদাচরণ, ভুল তথ্য দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া। অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় হবিগঞ্জ শহরের অনন্তুপুর এলাকায় আবুল কাশেমের বাড়িতে নাশকতা ও জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্যে হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে এক গোপন বৈঠক হয়। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে হবিগঞ্জ সদর থানার তৎকালিন এসআই একেএম রাসেল ও হবিগঞ্জ গোয়েন্দা শাখার এসআই মোকতুল হোসেন এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত নেতা মোজাহিদুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম এবং জিয়াউর রহমানকে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ‘মিডিয়ার মুখোমুখি ও জাতীয় উদ্দেশ্যে অধ্যাপক গোলাম আযম’ নামক ১৫টি ধর্মীয় উস্কানি মুলক বই, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর লেখা নাশকতার কাজে ব্যবহৃত ১’শ ৬১টি নিষিদ্ধ বই এবং প্রচার পত্র উদ্ধার করা হয়।

পরে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা শাখার এসআই মোকতুল হোসেন বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- জিআর ৩২১/১৫। এ মামলাটি হাফিজুল ইসলামকে চার্জশীট ভুক্ত শীর্ষ আসাসী করে হবিগঞ্জ আদালতে বিচারাধীন আছে। একই ভাবে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে লাখাই উপজেলার পূর্ব সিংহগ্রামে হাফেজ জুবায়ের আহমেদের বসত ঘরে নাশকতা ও রাষ্ট্রীয় আত্মঘাতি হামলার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনাকালে পুলিশের হাতে কয়েকজন সহযোগীসহ হাফিজুল ইসলাম গ্রেফতার হন।

এ সময় তার কাছ থেকে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারী আলী আহসান মোজাহিদের মুক্তির প্রচার-প্রচারণার পত্র, নাশকতা হামলার পরিকল্পনার বিভিন্ন তথ্য ইত্যাদি জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে লাখাই থানার তৎকালিন এসআই শ্রী বাবুল সিংহ বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ (২)/২৫ (ঘ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায়ও হাফিজুল ইসলামকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে পুলিশ। যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে বলে জানা গেছে।

শুধু নাশকতার মামলাই নয়, আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের মারপিট করে টাকা, স্টাম্প আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা সেকুল মিয়া বাদী হয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে সীমাহিন অভিযোগ থাকার পরও হাফিজুল ইসলাম নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা হাফিজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে গতকাল রাতে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর জানান, বিষয়টি তার জানা নেই, এ রকম কোন কিছু হলে জেলা আইনজীবি সমিতির বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(টিএইচ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১)