নিউজ ডেস্ক : যারা আন্তরিক এবং অকৃত্রিম হাসি হাসেন তাদের সত্যিকার সুখী মানুষ হিসেবে ধরা হয়। এই মানুষগুলো বিবাহিত জীবনেও সুখী থাকেন এবং দীর্ঘজীবী হন। এর কারণ খুঁজেছেন অ্যাসোসিয়েশন ফর সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স।

বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষের হাসির জন্ম হয় তার সংবেদনশীল অংশ থেকে। আমাদের কান কিছু শব্দের প্রতিধ্বনি শোনে বা চোখ দুটো পুরনো কোনো বন্ধুকে দেখছে বা আমাদের অন্য কোনো হাতের চাপ অনুভব করছে। এ সবই আমাদের মধ্যে আবেগের সঞ্চারণ করে যা মস্তিষ্কে চলে যায়। মস্তিষ্কের বাম পাশের এন্টেরিওর টেমপোরাল রিজিয়নকে উত্তেজিত করে। সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে যায় মুখে। এই অনুভূতিকে মুখে ছড়িয়ে দিতে দুটি পেশি সদাপ্রস্তুত। এর একটি জাইগোম্যাটিক মেজর যার অবস্থা চিবুকে। এটি ঠোঁটকে ওপরে তুলতে কাজ করে। অপরটি অর্বিকুলারিস ওকুলি যা চোখের চারদিকের অংশকে কুঞ্চিত করে দেয়। আপনি যখন সত্যিই আবেগাপ্লুত হয়ে হাসেন তখন এ দুটি পেশি একযোগে কাজ করে। তখন আপনার ঠোঁট হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে আর চোখের কোণায় কুঁচকে যায়।
মানসিক অবস্থার এই আন্তরিক প্রকাশকে বলা হয় 'ডাচিনি স্মাইল' যার নামকরণ হয়েছে ১৯ শতকের ফ্রেঞ্চ শারীরতত্ত্ববিদ গুলেম ডাচিনির নামে। ফ্রান্সের ডিউকরা মানুষের মুখের কোন ভঙ্গি কী প্রকাশ করে তা পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করতেন। সে সময়ের কথিত গবেষকরা ইলেকট্রোডের সরবরাহ দিয়ে মুখের পেশির পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব পরীক্ষা করতেন। মূলত ভয়ংকর অপরাধীদের বিষয়ে গবেষণার একটি অংশ ছিলো এটি।

ডাচিনির এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আগ্রহী হয়ে ডারউইনের 'ইনভেস্টিগেশন ইনটু ইমোশনস' তত্ত্ব প্রকাশ পায়। কিন্তু এ নিয়ে আগ্রহ ছিলো মানুষের। তবে তারও কয়েক যুগ পর যখন হাসি নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা শুরু হয় তখন ডারউইনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন অনেকে।

২০০১ সালের একটি গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলের এক মনোবিজ্ঞানী লিঅ্যান হারকার এবং ড্যাচার কেটনার ২১ বছর বয়সী এক নারীর এক বছরে তোলা সব ছবির সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের তুলনা বিষয়ক এক গবেষণা করেন। ফলাফলে বেরিয়ে আসে, যে নারীরা একেবার সবগুলো দাঁত বের করে এবং চোখ কুঁচকে ব্যাপক হাসির মাধ্যমে তার ইতিবাচক আবেগ প্রকাশ করেন তারা অনেক সুখী জীবনযাপন করেন।

২০১০ সালের একটি গবেষণায় ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকিয়ার্টিস্ট আর্নেস্ট অ্যাবেল এবং মাইকেল ক্রুগনার দেখান কীভাবে হাসির মাধ্যমে আপনার গোটা জীবনের চিত্র উঠে আসে। তারা এক বেসবল খেলোয়াড়ের ছবি তুলে রাখতে থাকেন ১৯৫২ সাল থেকে। তার মৃত্যুর পরও ছবি তোলা হয়। সব ছবি তুলনা করে দেখা যায়, ওই খেলোয়াড় বেঁচে থাকা অবস্থায় যেমন হাসি হাসতেন সেই রেশ এখনো রয়ে গেছে। ডাচিনি স্মাইল নিয়ে যারা বেঁচে রয়েছেন তাদের জীবনও বেশি দীর্ঘ ও সুখের হয়।

(ওএস/অ/আগস্ট ২৫, ২০১৪)