রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক সময়কার আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে অগ্নি সংযোগসহ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের বাড়িঘর, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগার ভাঙচুর ও লুটপাটসহ কমপক্ষে সাতটি মামলার আসামী আবুল হোসেন এখন নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চয় হয়েছে।

কালিগঞ্জের পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী বলেন, একই গ্রামের আদর আলীর ছেলে আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছে। ১৯৯৭ সালের ১২ এপ্রিল তৎকালিন সাংসদ শাহাদাৎ হোসেন হরতাল ডাক দিলে সড়ক অবরোধ করে আবুল হোসেনের নেতৃতেব কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বাঁধানো ছবি ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় থানা আওয়ামী লেিগর সাধারণ সম্পাদক মোজাহার হোসেন কান্টু বাদি হয়ে আবুল হোসেনসহ ৩৫ জনের নামে থানায় মামলা(জিআর-১২০/৯৭) করেন। একই বছরের ১১ এপ্রিল জুম্মার নামাজের পর আওয়ামী লীগ নেতা রায়পুরের নরীম আলী মাষ্টারের বাড়িতে ঢুকে তাকে রিভলবার দেখিয়ে জিম্মি করে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৫ এপ্রিল থানায় মামলা(জিআর-১২৮/৯৭) হয়। এ মামলার ১নং আসামী আবুল হোসেন।

দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ১৯৯৭ সালের ১১ এপ্রিল নারায়নপুর গ্রামের আল মামুন সরদারের দোকানে হামলা চালিয়ে ৩০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে আবুল হোসেন ও তার সহযোগিরা(জিআর-১২৩/৯৭)। একই দিনে কালিগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার ভাঙচুর, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয় আবুল হোসেনের নেতৃত্বে। এ ঘটনায় বাজারগ্রামের কাজী আব্দুর রহমান মামলা দিরেও সাধারণ ডায়েরী হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১২ এপ্রিল কঁকশিয়ালী গ্রামের রামপদ দাস এর দোকানে হামলা চালিয়ে টাকা ও মালামাল লুট করা হয় আবুল হোসেনের নেতৃত্বে। এ ঘটনায় রামপদ দাস বাদি হয়ে মামলা(জিআর- ১২২/৯৭) করেন থানায়।

আরশাদ আলী আরো অভিযোগ করে বলেন, তিনি নারায়নপুর জামে মসজিদের সহসভাপতি হিসেবে ২০১৯ সালের ৫ মে মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের টাকা জমির হারির টাকা থেকে খরচ করার কথা বললে আবুল হোসেন তাকে মারপিট করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাম করে। গত বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি তার ছেলে রবিউল আলম তার জমিতে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার সময় আবুল হোসেন এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কাজে বাধা দেয়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তার মধ্যস্থতায় আবুল হোসেন পিছু হঠতে বাধ্য হন। একইভাবে গত শনিবার বাড়ির প্রাচীর নির্মাণ করার সময় পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

স্থানীয় আওযামী লীগ কর্মী শাহাজান আলী, আমজাদ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, এক সময়কার আওয়ামী লীগ অফিস ও দলীয় প্রধানদের ছবি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাঙচুর করার আসামী আবুল হোসেন এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নব্য আওয়ামী লীগারের ঠেলায় প্রকৃত আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধারা জিম্মি হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে ভাড়াসিমলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, তিনি সারা জীবন আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শে বিশ্বাসী। ১৯৯৭ সালে তার নামে কয়েকটি মিথ্যা মামলা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী তাকে জমি লিখে দিয়েও দখল দিচ্ছেন না। উল্টে তাকে ও পুলিশকে হয়রানি করছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার নরীম আলী মাষ্টার বলেন, ১৯৯৭ সালে তার বাড়িতে হামলা চালায় আবুল হোসেন ও তার সহযোগীরা। থানায় তিনি মামলাও করেছিলেন। সে কিভাবে দলের একটি ইউনিয়ন সেক্রেটারী হলো তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১)