স্টাফ রিপোর্টার : সবজির দরে স্বস্তির পর্যায়ে থাকলেও ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বাজার ভেদে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। আর মাসখানেক আগে ব্রয়লারের কেজি ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।

এ দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক ধরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণেই দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, সরবরাহ বেশি থাকায় কিছুদিন আগেও কেজি প্রতি ১২৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি। এখন সেই মুরগি ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে ব্রয়লার মুরগির কেজি দুইশ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

খিলগাঁওয়ের কোনো কোনো দোকানে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ব্যবসায়ী মো. রবিউল বলেন, এখন অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য ব্রয়লার মুরগি কেনা হচ্ছে। তাছাড়া চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রচুর মুরগি কেনা হচ্ছে। আমাদের ধারণা এসব কারণে দাম বেড়েছে।

এদিকে, প্রাণীজ আমিষের এই সহজলভ্য খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ফরিদা বেগম নামের একজন বলেন, এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকা। খাসির মাংসের দাম ৮০০ টাকা। এতো দাম দিয়ে মাংস কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। অনেক আগেই গরু-খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন ব্রয়লার মুরগিও মনে হচ্ছে কপাল থেকে উঠে যাবে। আগে এক কেজি বয়লার মুরগি কিনতাম ১৩০ টাকা দিয়ে, এখন ১৬০ টাকা লাগছে।

রামপুরা বাজারের ক্রেতা রহিম বিশ্বাস বলেন, সপ্তাহে একদিন মাংস খাই। গরুর মাংসের অনেক দাম হওয়ায় আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। তাই প্রতি শুক্রবার মুরগি কিনি। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষেরা সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে।

এদিকে, ব্রয়লারের পাশাপাশি বেড়েছে সোনালী ও লাল কক মুরগির দামও। গত সপ্তাহে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩০০ টাকা হয়ে গেছে। লাল কক মুরগির দাম ২৫০ টাকায় উঠেছে, তা গত সপ্তাহে দুইশ টাকার আশেপাশে ছিল।

রামপুরার ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য মুরগির দাম বাড়ে। এখনও তাই হচ্ছে। ব্রয়লারের দাম কমলে অন্যান্য মুরগির দাম এমনিতেই কমে যাবে।

মুরগির দামে অস্বস্তি দেখা দিলেও স্বস্তি বিরাজ করছে সবজির দামে। শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রাজধানীর বাজারগুলো পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি তুলনামূলক কম দামেই কিনতে পারছেন ক্রেতারা।

তবে গত সপ্তাহের মতো এখনো বাজারে সব থেকে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে পটল ও ঢেঁড়স। এ দুটি সবজির কেজি এখনও কোনো কোনো বাজারে একশ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। শশার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়।

এছাড়া, মুলার প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস।

সবজির মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯৫ টাকায়।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী নূর আলম বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ এখনও ভালো আছে। তাই তুলনামূলক কম দামেই সবজি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে আর খুব বেশিদিন এই দামে সবজি পাওয়া যাবে না। টমেটো, কপির সরবরাহ কমে আসলেই সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যাবে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১)