আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১) নির্যাতনের ঘটনায় জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাসসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার নির্যাতীতা নিপার কাকা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে বরিশালের উজিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। মামলায় চিকিৎসক রবিন, তার স্ত্রী রাখি দাস ছাড়াও তাদের গাড়ি চালক বাসুদেব হালদারকে আসামি করা হয়েছে।

চিকিৎসক রবিনের গ্রামের বাড়ি উজিরপুর উপজেলার গজালিয়া এলাকায়। তবে জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে চাকরির সুবাদে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় বসবাস করছেন।

অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার বাবা একজন মানসিক প্রতিবন্ধি। তার মা দুই বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেঝ। অভাব অনাটন ও করোনার কারনে প্রায় ৭ মাস আগে নিপাকে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেয়া হয়।

বাদী তপন বাড়ৈ মামলায় অভিযোগ জানান, প্রায় সাত মাস আগে চিকিৎসক সিএইএস রবিনের বাসায় নিপাকে কাজে দেয়া হয়। তখন চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস বলেছিলেন নিজ সন্তানের মতো নিপাকে দেখে রাখবেন। ভালো খাবার দেবেন। কিন্তু গত (২৪ ফেব্রুয়ারী) বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় নিপাকে চিকিৎসক রবিনের গাড়ি চালক বাসুদেব ঢাকা থেকে উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে রেখে যায়।

এরপর নিপা বাড়িতে এসে জানায়, কাজে সামান্য ভুল করলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। বাসার মধ্যে আটকে রেখে প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হতো। গলা টিপে ধরা হতো। চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাসের নির্যাতনে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের কারনে কয়েক দিন আগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কোন ওষুধও খেতে দেয়া হয়নি। শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসক রবিনের গাড়ি চালক বাসুদেবকে দিয়ে তাকে উজিরপুরে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নিপাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অসুস্থ নিপাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে প্রলোভন ও নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। তাছাড়া এ ঘটনায় মামলা বা কাউকে কিছু জানালে ক্ষতি হবে বলে তাদের হুমকি দেয়া হয়। এ অবস্থায় তিনি (মামলার বাদী) নিপাকে পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসেন। সেখান থেকে ভোরে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসেন। এরপর দুপুরে তিনি বাদী হয়ে চিকিৎসক ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলাম জানান, হাসপতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের সহায়তায় নিপাকে তার চাচা স্বাস্থ্য কমপেক্স থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সামসুদ্দোহা তৌহিদ উজিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। নিপাকে উদ্ধারে শুক্রবার দিনভর অভিযান চালানো হয়। তবে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পরে, নিপাকে তার চাচা তপন বাড়ৈর মামা শ্বশুর বিমল বাড়ৈর আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বাড়িতে রাখা হয়েছে। আজ ভোরে ওই বাড়ি থেকে নিপাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিপা এখন থানায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, দুপুরে নিপার কাকা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চিকিৎসক রবিন, তার স্ত্রী রাখি দাস ও গাড়ি চালক বাসুদেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১)