চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরের মেঘনা নদীর নৌ-সীমানার পশ্চিমে অবস্থিত ইব্রাহীমপুরের চরের অসহায়, ভূমিহীনদের জন্যে বরাদ্দকৃত লীজপ্রাপ্ত চাষাবাদের সরকারি খাস জমির মাটি অবৈধভাবে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে কেটে ট্রাকটার ও বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুমিহীন কৃষকদের মাঝে চাপাক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা যায়।

এ ঘটনাটি ঘটেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ের ১১নং ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ১২৮নং নরহদ্দি ও ১১৯নং চর মুকন্দি এলাকায়। এখানে একটি মৎস্য প্রকল্পের নামের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে সরকারি কৃষি খাস জমির চরের মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে কেটে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বিক্রি করার অভিযোগ এনে ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার ভুমিহীন কৃষকরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ অভিযোগ করেন ওই মৌজার ২৮ জন ভুমিহীন লিজ প্রাপ্ত কুষকদের পক্ষে মো. মোক্তার গাজী, ইদ্রিছ আলী গাজী, মো. ইসমাইল গাজী, আব্দুল মান্নান দিদার, রফিকুল ইসলাম দিদারসহ অনেকে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের ১২৮নং নরহর্দ্দি ও ১১৯ মুকন্দি মৌজার ৩৩১ দাগে সরকারি মালিকানাধীন বরাদ্বকৃত (লিজপ্রাপ্ত) ব্যাক্তিরা দীর্ঘ দিনের কৃষিকাজে ব্যবহাকৃত (বোরোসহ সকল ফসলি) জমিতে কনশার্স এগ্রো লিমিটেড মৎস্য চাষ প্রকল্পের নামের সাইনবোর্ড সাটিয়ে ১৫/১৬ জন ব্যাক্তির একটি গ্রুপ প্রায় ১মাস যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানের লোক এনে আধুনিক পদ্বতির ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিশাল গভীরতা সুস্টি করে সে মাটি অন্যত্র বিক্রি করে যাচেছ।

যে সব ব্যাক্তিরা এই জমিগুলো সরকার থেকে বরাদ্ব (লিজ) নিয়ে মালিকানা পেয়েছে, তাদের সাথে কোন প্রকারের যোগাযোগ না করে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে জোর পূর্বক লিজপ্রাপ্ত ভূক্তভোগীদের এ স্থানের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ করেন তারা।

ভূমি দখলকারীরা তাদের মনগড়াভাবে সে স্থান থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। এমনকি ওই মৌজার পার্শ্ববর্তী সরকারি দুটি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। ৪ একর পরিমানের বিশাল এলাকা জুড়ে এভাবে মাটি কেটে মাছ চাষের ঝিল তৈরী করা হলে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে গুচ্ছ গ্রামগুলো হুমকির মুখে পড়বে এবং এলাকাটি তলিয়ে গিয়ে ভূমিহীন, গরীব ও অসহায়দের জন্য সরকারের কোটি কোটি টাকার বরাদ্বকৃত প্রকল্প বেস্তে যাওয়ার উপক্রম হবে।

সরোজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৪ একর পরিমানের বিশাল এলাকা জুড়ে ২টি আধূনিক পদ্বতির ভেকু মেশিনের মাধ্যমে মাটি কেটে ১০/১২ টি ট্রাক্ট্ররের মাধ্যমে মাটি বহন করে নদী পাড়ে এনে ফেলছে। সেখান থেকে পুণরায় ভেকু মেশিন দ্বারা মাটি বহনকারী বাল্কহেড দিয়ে নদী পথে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে।

কৃষিজমির লিজপ্রাপ্ত ভোক্তভোগী তাহের শেখ, কালু শেখ, আলমগীর গাজী, মুন্না হাওলাদার, হাফেজ বেপারী, মঞ্জুরুল ইসলাম, বাসু মিজি, মান্নান শেখ, মিলন হাওলাদার, নাছির আখন্দ, মান্নান খান, মনছুর গাজী, ইসমাইল গাজী, শামছুদ্দিন, মোক্তার গাজী, হানীফা শেখ, মনা বেপরী, বাসু হাওলাদার, দুলাল গাজী, কালু জমাদার ও নজির গাজী জানান, সরকার আমাদেরকে চাষাবাদের জন্য এ জমিগুলো বিগত ১৫-২০ বছর পূর্বে চর জেগে উঠার পর থেকেই পর্যায় ক্রমে বরাদ্ব (লিজ) দিয়েছে। আমরা এ জমিতে চাষাবাদ করে জিবীকা নির্বাহ করছি।

ফসলি জমি বরাদ্ব পাওয়ার পর সরকারি বিধান ও নিয়ম মেনে এ জমির কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবোনা,তা’মেনে কাজ করছিলাম। অথচ একটি মহল আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে মৎস্য চাষের ঝিল তৈরীর নাম করে জমি থেকে মাটি কেটে ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে বিভিন্ন ব্রিকফিল্ডে বিক্রি করে দিচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ জমির পাশে থাকা আশ্রয়ন প্রকল্প ও আমাদের বসবাসকৃত এবং ফসলি জমিগুলো নদী ভাঙ্গার স্বীকার হওয়ার শতভাগ সম্বাবনা রয়েছে।

মৎস্য প্রকল্পের দায়িত্বরত মুন্না তালুকদার ও নিরব আহমেদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, এ ভূমির লিজপ্রাপ্ত প্রকৃত মালিক কাউছার আহমেদ খান (বাবু), ভূলু খাঁ ও শিউলি বেগমের কাছ থেকে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঝিল তৈরী করার জন্য একটি চুক্তিনামা করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে আমরা তাদের জমি থেকে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে ঝিল তৈরী করে দিচ্ছি।

এখানে অন্য কোন মালিকের জমিতে আমরা যাচ্ছিনা। যদি তাদের কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তারা আমাদের সাথে যাদের চুক্তি হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করুক। আমরা এখানে এসেছি কাজ করতে, সে অনুযায়ী আমার মাটিকেটে ঝিল তৈরী করে দিচ্ছি এবং পাশ্ববর্তী মুকন্দি মৌজায় বরাদ্ব (লিজপ্রাপ্ত) মালিকদের কাছ থেকে আমরা কিছু জমি খরিদ করি। সেখানে আমরা এখন পর্যন্ত যাইনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইমরান হোসেন সজিব জানান, যেহেতু আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। সেহেতু বিষয়টি যাচাই বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে ভোক্তভোগীদের দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে বিষয়টি নজরে নিয়ে অচিরেই যেন আইনীনু ব্যবস্থা নিবে।

(ইউ/এসপি/মার্চ ০১, ২০২১)