স্টাফ রিপোর্টার : বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে পারছে না সরকারবিরোধী দলগুলো। এতে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। যার কারণে দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রপিং-কোন্দল ও সংকট তৈরি হলেও সহসায় সেগুলো মিটে যায়। যদিও এসব ক্ষোভ আর হতাশা দিনকে দিন দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের কর্মীদের মাঝে দানা বাধছে। কেউ কেউ রাজনীতি থেকে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন কমে যাচ্ছে।

ফলে এসব নেতা ও কর্মীরাও অনুপ্রবেশকারিদের ঠেলায় টিকতে না পেরে রাজনীতি থেকে নিষ্কৃয়ী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অনেক সংসদীয় আসনে দলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত আর্দশের ব্যাক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় সেইসব এলাকায় একপ্রকার অত্যাচার চলছে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপর। আবার অন্যদিকে দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজেদের পছন্দ মতো নতুন নেতৃত্ব বসাচ্ছে। যারা নেতৃত্ব দিতে জানেনা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে তাদের কোনো দিন রাজপথ দূরে থাক দলের বিভিন্ন কর্মসূচির পেছনে অবদি দেখা যায়নি।

রাজবাড়ী জেলার প্রায় দুই ডজন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব সবচেয়ে বেশি বাড়ছে তৃণমূলের। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলছেন তারা। তাদের অনেক দম্ভ! নেতা-কর্মীরা কোনো কাজে এমপিদের কাছে গেলে চরম দুর্ব্যবহার করেন এবং বলে থাকেন, কেউ কি ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছো? নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন তাই এমপি হয়েছি। নির্বাচনের পর নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও তারা কমিয়ে দেন। কেউ কেউ ছয় মাস বা এক বছর পর নির্বাচনী এলাকায় গেলেও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। ফলে নেতা-কর্মীরা এমপিকে দলীয় কর্মকাণ্ডে পান না।

এলাকার নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন এমন অভিযোগও উঠেছে রাজবাড়ীর এক এমপির বিরুদ্ধে। এমপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ দূরত্ব আর ঘোচানো সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কয়েকজন জানান, আমাদের নেতা-কর্মীরা ও আমরা এমপির কোনো কাজের বিরোধিতা করলে নিজ দলের নেতাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। আমাদের এমপির সংসদীয় তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের সিংহভাগই তার সঙ্গে নেই। তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন না। শুধু নিজের সংসদীয় এলাকায় নয়, গোটা জেলার রাজনীতিতেই নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন তিনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় নিজের পছন্দ না হলে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিয়েছেন। তার হাত থেকে সংবাদকর্মীরাও রক্ষা পায়নি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন তার 'হাতুড়ি লীগ’।

অনেক নেতা কর্মীকে বিনা কারণে কমিটি থেকে বহিস্কৃত করা হয়েছে। যারা দুর্দিনে দলের হাল ধরে রেখেছেন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে হাইব্রিড সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ নেতাদের ভিড়ে মূল্যহীন হয়ে গেছেন এমন দুঃসময়ের হাজারো ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ইচ্ছা ছিল রাজনীতি করে জনগণের সেবা করব, জনো উন্নয়নমূলক কাজ করব। কিন্তু সুবিধাভোগী হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাদের ভিড়ে আমাদের মত ত্যাগী নেতাদের কোনো মূল্য নেই। কোন কিছু করার সুযোগও নেই।

(একে/এসপি/মার্চ ০২, ২০২১)