আশজাদ রসুল সিরাজী, গাজীপুর : তথ্য চেয়ে ‘তথ্য অধিকার আইনে’ করা আবেদনপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার একটি অভিযোগে জানান, তথ্য অধিকার আইনে নির্দিষ্ট ফরমে তথ্যের জন্য করা আবেদন গ্রহণ করেন নাই গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আমি সিটি কর্পোরেশন এলাকা ভুরুলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ার অধিকার রাখি।

বুধবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বরাবর তথ্য চেয়ে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে গ্রাহক সেবা বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্মরত কর্মীরা আবেদনটি গ্রহণ না করে বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা অথবা মেয়রের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি অফিস ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তাঁর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ কিবরিয়ার সাথে সাক্ষাত করলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করে বাসায় গিয়ে মেয়রের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, মেয়র সাহেবের অনুমতি ব্যতীয় এই আবেদন গ্রহণ করলে আমাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে।

এ তথ্য যাচাই করতে সরেজমিনে গেলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টজনদের সাথে কথা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ধরণের আবেদন জমা দিতে গেলে নানাভাবে নাগরিকদের হয়রানি হতে হয়। তথ্য অধিকার আইনে দেয়া যে কোন আবেদনপত্র গ্রহণে মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের মৌখিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ -এর ভুমিকায় বলা হয়েছে এ আইনটি “তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।” দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘তথ্য অধিকার’ বিষয়ে ধারা-৪ এ বলা হয়েছে, “এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।”

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বুধবার একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। কিন্তু অপর প্রান্তে কেউ ফোন ধরেননি।

এদিকে আবেদন গ্রহণ না করার বিষয়ে কথা হয় সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে। তিনিও এ বিষয়ে কিছু করার নেই বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন এবং দ্রুত অফিস থেকে অন্যত্র সরে যান।

এ বিষয়ে তথ্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লিটন কুমার প্রামাণিক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনার আবেদনটি ডাকযোগে পাঠান।

এ বিষয়ে গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী শাহানাজ আক্তার বলেন, তথ্য চাওয়ার যেমন অধিকার আছে, তথ্য দেওয়াটাও দায়িত্ব।

(এস/এসপি/মার্চ ০৩, ২০২১)