রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নরহরকাটি মৌজার ৫০ বিঘা অর্পিত সম্পত্তিতে বসবাসকারী ৪০টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করার প্রচেষ্টার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। দেওয়ানী আদালত ও ভূমি আপিল বোর্ডে হেরে যেয়ে আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে  দেওয়ানী রিভিশন করে কয়েকবার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভূমিহীন শওকত আলীর অভিযোগ।

জেলা প্রসাশকের কাছে পাঠানো অভিযোগ থেকে জানা গেছে , দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের মোবারক আলীর পিতা আব্দুর রহমান কালিগঞ্জ উপজেলার নরহরকাটি মৌজার প্রায় ৫০ বিঘা জমি নীলকান্ত ঘোষ এর সাথে বিনিময় করার চেষ্টা করলে তা রেজিষ্ট্রি বিনিময় না হওয়ায় পরবর্তীতে তা ‘খ’ তপশীলভুক্ত করা হয়। ওই জমি হাজী আব্দুর রহমান স্টেটের নামে দেওয়া হয়। মোতাল্লি হন আব্দুর রহমান।

বর্তমানে ওই এস্টেটের মোতাল্লির দাবিদার আব্দুর রহমানের পোতা আনোয়ারুল ইসলাম। ওই জমিতে ১৯৭৮ সাল থেকে ৪০টি ভূমিহীন পরিবারে বসবাস করতো। যদিও ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর ‘খ’ তপশীল বাতিল করা হয়। খুলনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ৪১/১২ মিস আপিল মামলায় ওই জমি সরকারের ১/১ নং খতিয়ানে রেকর্ড বহাল থাকে। এরপরও দেওয়ানী মামলা ও ভূমি আপিল বোর্ডের মামলায় জমি নিজেদের প্রমান করতে ব্যর্থ হয়ে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে আনোয়ারুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা।

একপর্যায়ে আনোয়ারুল ইসলামের বাবা মোাবারক আলী সরকারের বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে ২৪/২০১০ মামলা করে নিষেধাজ্ঞা না পেয়ে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১৮০৩/২০১৩ দেওয়ানী রিভিশন মামলা করে এ পর্যন্ত কয়েকবার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নেয়। ওই মামলার ৯নং বিবাদী আব্দুল হামিদ মারা গেলেও তিন নং বিবাদী কেরামত আলী ওরফে লিয়াকত আলী পক্ষভূক্ত হয়েছেন।

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আনোয়ারুল ইসলাম ওই জমি ‘খ’ তপশীলভুক্ত করে অর্পিত সম্পত্তির হোল্ডিং খুলিয়া ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করার আদেশ পাওয়ার চেষ্টা করে মৌতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার অসীম কুমার হালদারের গত বছরের ২২ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ি ওই জমির একাংশে বেশ কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে ও সেখানে যৌথভাবে মাছ চাষসহ চাষাবাদ করে বলে উল্লেখ করা হলে আবেদন না’মঞ্জুর হয়। একপর্যায়ে ৪৩ বছর ধরে ওই জমিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠলে ভূমিহীন শওকত আলী বাদি হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (পিটিশন- ৩৪৮/২১ নং) দায়ের করেন।

এ খবর পেয়ে গত ৮ জানুয়ারি ভূমিহীন আবুল হোসেনের বসত বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আবুল হোসেন বাদি হয়ে আনোয়ারুল ইসলামসহ ১৪জনকে আসামী করে ১০ জানুয়ারি থানায় মামলা দায়ের করেন। একইভাবে ৯ জানুয়ারি নিজের ঘেরের বাসায় নিজেরাই আগুন দিয়ে আনোয়ারুল ইসলামের সহযোগী শফিকুল ইসলামকে দিয়ে ১১ জানুয়ারি থানায় মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে ভূমিহীনদের নামে। এ ছাড়াও ভূমিহীনদের উপর হামলা করে আনোয়ারুল ইসলাম ভূমিহীনদের নামে দু’টি চাঁদাবাজি ও মারপিটের মামলা, তার ভগ্নিপতি জিএম ফজলুর রহমান বাদি হয়ে ভূমিহীনদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন।

আবুল হোসেনের বাড়িতে আগুন দিয়েও সুবিধা করতে না পারায় আনোয়ারুল ইসলাম ওই ৫০ বিঘা জমির মধ্যে ৪০ বিঘা জমি একই এলাকার মাজাহারুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, হবিবর রহমান ও আকবর আলীর কাছে লিজ দিয়েছে বলে মঙ্গলবার কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলীর কাছে তাদের কয়েকজনকে ডাকানোয় তারা জানতে পারেন।

সহকারি পুলিশ সুপার ও উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীর মাধ্যমে লীজ গ্রহীতারা ভূমিহীনদের জমি দখল করার লক্ষ্যে সোমবার ওই জমির পাশে কাটা তার ও বাঁশ জমায়েত করেছেন। ওই জমি জবরদখল করতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা মিলে আদালতের ১৪৫ ধারার নোটিশ ভঙ্গ করে তাদেরকে যে কোন সময় উচ্ছেদ করতে পারেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

তবে এ ব্যাপারে আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

(আরকে/এসপি/মার্চ ০৪, ২০২১)