রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : হঠাৎ করে রড সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রাম সহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। বিপাকে পড়েছে সরকারের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, রড সিমেন্টের ডিলার,রিটেইলার ও সাধারণ ক্রেতারা। মাত্র ৭ দিনেই প্রতিটি ব্রান্ডের সিমেন্টের দাম বস্তা প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর প্রতি মেঃ টঃ রড ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। রড সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর কাজ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক লেবার ও মিস্ত্রি। বর্তমানের এই শুষ্ক সময়ে এই সব উন্নয়ন মুলক কাজ সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনিতেই গত এক বছর থেকে করোনার কারণে রড সিমেন্টর ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনে আসছিল। তার উপর দফায় দফায় রড ও সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জেলায় সমস্ত কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। 

কুড়িগ্রাম শহরের কয়েকজন ঠিকাদার জানান, তারা সরকারের নির্ধারিত রেটেই কাজের চুক্তি করেছিল। এবং তাদের কাজ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় চলছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে রড সিমেন্টর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তারা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।

স্থানীয় এলজিইডির ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম শাহী জানান, তার প্রায় এক কোটি টাকার স্কুলের কাজ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে ছাদ ঢালাই এর সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু রড সিমেন্টর দাম বেড়ে যাওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ পর্যায়ে কাজ করলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান গুনতে হবে। যেহেতু সময় আছে তাই বাজার স্থিতি না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করবে না।

কুড়িগ্রাম জেলার বসুন্ধরা সিমেন্টের ডিলার মোঃ সোহাগ জানান, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বসুন্ধরা, লাফজ সুপারক্রিট, কিং ব্রান্ড, শাহ স্পেশাল সহ প্রতিটি সিমে›ন্টের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। প্রতিদিনেই বাড়ছে। সেই সাথে চলছে পরিবহন সংকট।

তিনি আরো জানান, প্রতিটি কোম্পানী সিমেন্ট ও রডের দাম বাড়িয়েছে। করোনার কারণে কোম্পানী গুলো চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে চাহিদা অনুযায়ী ক্লিংকার ও অন্যান্য কাাঁচামাল নিয়ে আসতে পারেনি। ওই সব দেশেও তাদের কারখানা গুলোও বন্ধ ছিল। তারা নিজেদের দেশের চাহিদা পুরণ করার পর রপ্তানী করে। তাই এ সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ রড সিমেন্টের কাঁচামাল পুরোপুরি আমদানী নির্ভর। তবে স্থানীয় রড সিমেন্টর ব্যবসায়ীরা আশা করছেন আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংকট সমাধান হতে পারে।

৬মার্চ শনিবার গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী খাইরুল আলম জানান, রড সিমেন্টর দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের বিভাগের অনেক ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে, অনেকে ধীর গতিতে কাজ করছে। তবে ঠিকাদারদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করেন। তা না হলে আগামী অর্থবছরে তাদের নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রাম এলজিইডির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তাদের বিভাগে প্রায় এক থেকে দেড়শ কোটি টাকার কাজ চলছে। চলতি বছর সিমেন্ট রডের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। কিছু ঠিকাদার কাজ বন্ধ করলেও আবার তারা দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করবে।

(পিএস/এসপি/মার্চ ০৬, ২০২১)