স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামিমা আকতার মিনুকে অব্যহতি দিয়ে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে আব্দুল খালেককে। হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন তা নিয়ে অনেকের মনেই জেগে উঠছে প্রশ্ন।

গত ১৪ জানুয়ারি সাবেক অধ্যক্ষ আতাউল হক খানের বদলি জনিত কারণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শামিমা আকতার মিনুকে। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি আর্থিক ক্ষমতা। এর একমাস না পেরোতেই গত ৭ মার্চ (রবিবার) কলেজের কাছে শিক্ষা অধিদপ্তর (কলেজ শাখা-২) থেকে ৪ মার্চ ২০২১ তারিখে স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আসে এই মর্মে যে, কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক আব্দুল খালেককে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক ক্ষমতা সহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে।

এই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক শামিমা আকতার মিনু। কলেজ সরকারি হওয়ার পরবর্তী সময়ে যদি চাকরির বয়সসীমা বিবেচনায় নেওয়া তবে কলেজটিতে কর্মরত প্রত্যেক শিক্ষকের সরকারি চাকরির বয়সসীমা সমান মেয়াদের। অপরদিকে হটাৎ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে রদবদল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাংশা সরকারি কলেজটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৫ সালে সরকারি করণ করা হয়। বর্তমানে কলেজে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী ও ৫৭ জন শিক্ষক রয়েছে।

আরো জানা গেছে, কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আতাউল হক খানের বদলি হয়ে যাওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে শামিমা আকতার মিনুকে। এর কয়েকদিন পর কলেজের কয়েকজন শিক্ষক একত্রিত হয়ে শুরু করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তনের কার্যক্রম। তবে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে রাজনৈতিক কলহের জের, আর্থিক প্রলোভন, কলেজে প্রভাব বিস্তার ও ব্যক্তি ক্ষমতা বাস্তবায়ন এর মূখ্য উদ্দেশ্য।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, বর্তমান শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রেরিত নথি অনুসারে যাকে কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে সে রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়েত ইসলামির একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। জামায়েত ইসলামি নিষিদ্ধের পর ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সময় শুরু করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘরে আনাগোনা।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামিমা আকতার মিনু পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের ভাবি আর অপরদিকে অধিদপ্তর থেকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত নবাগত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার মূল কারিগররা স্থানীয় সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক সহপাঠী। আর তাদেরকে কেন্দ্র করে পাংশায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ। একদিকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীরা আর অপরদিকে হাইব্রিড। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে শামিমা আকতার মিনুর রাজনৈতিক কার্যকলাপের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলেও পরিবারের রাজনৈতিক কারণে কলেজে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষকে কারণে এমন ঘটনার সূচনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষকরা বলেছেন, বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষকের ব্যক্তি স্বার্থ ও অপরাজনীতির কারণে কলেজের শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যাদির উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তন না করে অধ্যক্ষ হিসেবে একজন কে পাঠালে ভালো হতো। এতে করে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিংটা আরো জোড়ালো হবে। যা অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি বয়ে আনবে না।

কলেজটির সদ্য দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল খালেকের উদ্দেশ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ব্রেনের ধারণ ক্ষমতার জেরে যেটা মনে হয় এবং কলেজের কিছু শিক্ষকদের নিয়ে কলেজের বাইরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আলোচনা হয়। যার প্রভাব এসে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পড়ে।

হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে কেন রদবদল ঘটলো? এটাই এখন সবার মনে প্রশ্নের জানান দিচ্ছে।

(একে/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২১)