চৌধুরী আবদুল হান্নান


ইসলাম ধর্ম প্রচারের সূচনাকালে নবীজীর মদিনায় হিজরতের অব্যবহিত পরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করতে চাই। খ্রিষ্টান ধর্মের ৬০ জনের একটি দল নজরান প্রদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম ও এর প্রচারক সম্পর্কে জানার জন্য মদিনায় এসেছিলেন।

“আসরের নামাজের পর খ্রিষ্টান-সঙ্গ মদিনার মসজিদে উপনিত হইলেন। ক্রমে খ্রিষ্টানদিগের সান্ধ্য উপাসনার সময় উপস্হিত হইল, তাহারা সেই মসজিদেই উপাসনা করিবার অনুমতি চাইলেন। এদিকে মুসলমানদিগেরও মাগরিবের নামাজের সময় সমাগত। কাজেই সাহাবাদিগের অনেকেই খ্রিষ্টানদিগের সেই প্রস্তাবে আপত্তি তুলিলেন কিন্ত হযরত মুহম্মদ (স) সে আপত্তি শুনিলেন না; পবিত্র মসজিদে নববীর ভিতরেই তিনি খ্রিষ্টানদিগকে উপাসনা করিবার অনুমতি দিলেন। খ্রিষ্টানরা পূর্বদিকে মুখ করিয়াখ্রিষ্টান প্রথায় তাঁহাদের উপাসনা করিতে লাগিলেন; আর মুসলমানরা কাবা শরীফের দিকে মুখ ফিরাইয়া নিজেদের নামাজ সমাধা করলেন। খ্রিষ্টানগণ হযরতের এই মহানুভবতা ও উদারতা দেখিয়া একেবারে অবাক হইয়া গেলেন।”

এ ঘটনাটি নবীজীর জীবনী থেকে নেয়া।তাঁ জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের এমন মাহাত্ম্য ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের হাজারো উদাহরণ রয়েছে।

মক্কা বিজয়ের পর যখন ইসলাম ধর্মের বিজয় পতাকা উড়ছে, তখন তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করতে পারতেন কিন্ত দেশে সকল ধর্মের মানুষের বসবাসের জন্য উন্মুক্ত রেখেছিলেন। মানবতার পরম সুহৃদ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর বাণী ছিল জোর করে নয়,ভালোবাসা দিয়ে ধর্মের পথে মানুষকে ডাক দিতে হয়।

কিন্ত আজ আমরা কী দেখছি ? ইসলাম ধর্ম—যে ধর্ম এমন শান্তি-সম্প্রীতি শেখায়, সে ধর্মের নামে কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ ভিন্নমতের মানুষের প্রতি,মুক্তমনা লেখকদের প্রতি কীভাবে এত সহিংস হয় ?

এ পরিস্হিতিতে স্বস্তির বার্তা দিলো আদালত—দীপন-অভিজিৎ হত্যা মামলার সকল আসামির ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়ে। দেশে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে আশা জাগানিয়া বার্তা ! কেবল আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উন্মত্ততা সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে না, প্রয়োজন ধর্মের মূলবাণী ব্যাপক প্রচার করে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন।
কিন্ত এ দায়িত্ব কার ?

যাঁরা ধর্মীয় পন্ডিত ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের এ দায়িত্ব নিতে হবে, দেশে শত শত মসজিদ রয়েছে, ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে, তাঁদেরকে এ দায়িত্ব নিতে হবে ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।