নওগাঁ প্রতিনিধি : সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেছেন, এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতত্ব নিদর্শনের মধ্যে নওগাঁর ঐতিহাসিক সোমপুর বৌদ্ধবিহার (পাহাড়পুর) একটি। এই বিহার গোটা বাংলাদেশের মানুষের গর্বের ধন। এই সোমপুর বৌদ্ধবিহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জল নিদর্শন। এটি রক্ষা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। এটি রক্ষা করার দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি মানুষের। মন্ত্রী বলেন, অতীতে অনেক মূল্যবান প্রত্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে, নষ্ট হয়েছে। আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর এটি করা যাবেনা। এটি নিজের সম্পদ ভেবে আপনারা রক্ষা করবেন। এসব মূল্যবান প্রত্ন সম্পদ নিয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আগামীতে আরো এগিয়ে যাবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ইতোমধ্যেই এসব সম্পদ রক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। রবিবার রাত পৌনে ৮টায় তিনি ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার পরিদর্শনকালে আয়োজিত সমাবেশে কথাগুলো বলেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা পাহাড়পুরকে পর্যটক বান্ধব হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। আগে যেমন বিদেশী পর্যটকরা আসত, ছাত্র-ছাত্রীরা আসত, আমরা সে পরিবেশ ফেরাতে চাই। ইতোমধ্যেই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা নিয়ে বিশ্বের মধ্যে আলোচনা চলছে। আবারও পর্যটকরা আসবে এবং এর উপর গবেষণা চালাবে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শিরিন আকতার এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, নওগাঁ ৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ড. রনজিৎ কুমার বিশ্বাস, নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক, জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন, নওগাঁর পুলিশ সুপার মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টডিয়ান মাহবুব উল হক, দক্ষিন এশিয়া পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
বিকেলে সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পৌঁছলে তাকে ফুলের মালা দেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে বৌদ্ধবিহারের সীমানা প্রাচীরের বাইরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। বিহারের বাইরে নির্মিত একটি মঞ্চের চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে উত্তেজিত কর্মী সমর্থকরা। এ সময় মন্ত্রী গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।
সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি দক্ষিন এশিয়া পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়ছে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কর্মকাণ্ডসমূহের মধ্যে রয়েছে, বৃক্ষরোপন, বিহারের বাউন্ডারী ওয়াল, ওয়াক ওয়ে, পিকনিক শেড, টয়লেট, বাস-কার পার্কিং, ডরমেটরি, আনসার শেড, মসজিদ, এনট্রি কমপ্লেক্সসহ প্রয়োজনীয় সৌন্দর্য বর্ধক উন্নয়ন কর্মকান্ড। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে মন্ত্রী প্রথমে ওই প্রকল্পর আওতায় আনুষ্ঠানিক ভাবে আনসার শেডের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাত ৮টায় মন্ত্রী শিল্পকলা একাডেমি অয়োজিত ‘সোমপুর কথন’ নামে একটি প্রত্ন নাটক উপভোগ করেন।
(বিএম/এএস/এপ্রিল ২১, ২০১৪)