ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন নীলফামারীর কৃষক । সূর্যমুখী চাষে উৎপাদন খরচ কম কিন্তু বেশি লাভ এবং ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় নীলফামারীর কৃষকেরা ঝুঁকছেন সূর্যমুখী চাষে । 

নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব গুড়গুড়ি শেখ পাড়ায় গোলাম রব্বানী ও সৈয়দ আলম আলী শাহ ফকির দুজন মিলে ১৭ বিঘা আবাদী জমিতে এই প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমখী চাষ শুরু করেছেন । তাদের এই আবাদ রংপুর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় । প্রতি বিঘায় ৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় আট মণ ফসল উৎপাদন সম্ভব বলে আশাবাদী তারা । আর প্রতি মণ বিক্রয়ের আশা তাদের ৩ হাজার টাকা । প্রতি কেজি বীজ ১৮’শ টাকায় সরবরাহ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ।

৩’শ ৭৫ বিঘা জমিতে নীলফামারী সদর উপজেলা সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে এ বছর এবং পুরো জেলায় ১৯’শ ৯০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে ।

আজকাল অনেকেই সূর্যমুখী ফুল শখ করে বাসার ছাদে কিংবা ঘরের বাড়ান্দায় থাকা টবে অন্যান্য ফুলের সাথে লাগিয়ে থাকেন সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য । সূর্যমুখী ফুল সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করে। মায়াময়ী ঘন হলুদ সূর্যমুখী ফুলের প্রতিটি শাখা জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে নানান রঙের প্রজাপতি আর মৌমাছী। সূর্যমুখী চাষ কী শুধু মাত্র শোভা আর সৌন্দর্য বাড়ায় ? না বরং এর রয়েছে আরও নানা রকম গুণাগুণ। এই ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার গুণ অনন্য, দেশীয় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

বানিজ্যিকভাবে মাঠে চাষাবাদের জন্য নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় চাষীরা শুরু করেছে সূর্যমূখী চাষাবাদ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কৃষি পূর্নবাসনের আওতায় চাষীদের এই উদ্দ্যোগ। এ অঞ্চলের মাটির গুনাগুন, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমূখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় ইহার চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলছে। চাষের মাঠে সবল সতেজ গাছ ও ভালো ফুল আসায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষী।

বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের কৃষক রাম বাবু বলেন, সূর্যমূখী একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদে সময় খরচ দুটোই কম লাগে। জমিতে স্বল্প চাষে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। রোপন থেকে কর্তন পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সূর্যমুখীর গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করি। পৌরসভার চিকনমাটি গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, সূর্যমুখীর জমিতে সর্বাধিক দুইবার সেচ ও অল্প কিছু রাসায়নিক সার দিলেই হয়।একটু পরিচর্যা করলে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮মন ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সূর্যমুখীর তেল শরীরের কোলেস্টরাল ঠিক রাখে। এক কথায় সূর্যমূখীর তেল মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। এবারে উপজেলায় প্রদর্শনীসহ ৩’শ বিঘা (একশত একর) জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। সূর্যমূখীর চাষের মাঠের চারদিকে অপরুপ দৃশ্য। ফুলে ফুলে ভোঁ ভোঁ করছে মৌমাছি। সূর্যমূখী সূর্যের দিকে কিরন নিতে চাহিয়ে রয়েছে তাহার পানে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে কৃষি পূর্নবাসনের আওতায় ২’শ জন কৃষককে সরকারী বরাদ্দে ১ কেজি সূর্যমূখী বীজ দেয়া হয়েছে। কম খরচে বেশী লাভের সুযোগ থাকায় অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। একটু পরিচর্যা নিলে প্রতি বিঘায় ১০মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব রহমানে বলেন, সূর্যমুখী বীজ রোপনের ৫৫দিন হতে ৬০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু করে। ফুল ঝড়ে ফসল সংগ্রহ করতে ১১০ দিন সময় লাগে।

(কে/এসপি/মার্চ ১১, ২০২১)