মানিক সরকার মানিক, রংপুর : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যলয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠন। 

শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটরিয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রের (প্রথম খণ্ড) প্রকাশ করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান।

সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক মতিউর রহমান বলেন, আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রথম খন্ড প্রকাশ করছি। এতে জনগণের টাকায় পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নানান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য বিভিন্ন সংঘবদ্ধ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, হয়রানি, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার মদদে তিনি এসব দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।

মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ড. আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবের হোসেন চৌধুরী, সুচিত্রা সেন এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদও এসব অনিয়মে যুক্ত রয়েছেন। আইন অমান্য করে তিনি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের উপাচার্য এবং তাঁর মা দু’জনে মিলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।

উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আর বিভাগের প্রধান হিসেবেও তিনি সদস্য। অপরদিকে তার মা বিশেষজ্ঞ সদস্য। এটা কী কওে সম্ভব? এটা কী প্রমাণ করে না বাঁেশর চেয়ে কঞ্চি বড় ? এছাড়াও আবুল কাশেম মজুমদারকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বোর্ডের অন্তত ১০টি বোর্ডে সদস্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনকে চারটি বিভাগে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।

উপাচার্যের পিএস আমিনুর রহমানের ভায়রা মাহমুদুল হককে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক বছর না যেতেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে। উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সহকারী ভর্তি জালিয়াতির অপরাধে সিন্ডিকেটে সাজাপ্রাপ্ত আবুল কালামের স্ত্রী নুরনাহার বেগমকে সেমিনার সহকারী, মামাতো ভাই গোলাপ মিয়া, বন্ধুর ছোট ভাই হযরত আলীকে এমএলএসএস পদে এবং ফুফাতো ভাই কাওসার হোসেনকে সেমিনার সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।

আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। পরিবহন পুলের সাথে সংযোগ সড়ক নামে ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। ইউজিসির বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার কাজকে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। যেখানে রাস্তা নির্মাণের কাজ করেছে মেসার্স ফল ভান্ডার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। লিখিত বক্তব্যে উপাচার্যের আদালত অবমাননা, ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে অনিয়ম, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে অনিয়ম, ধারাবাহিক অনুপস্থিতিসহ ১১১টি অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়।

এদিকে, আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষকরা। লিখিত বক্তব্যে ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কথা উঠে আসলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা, সেশনজট, শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকটসহ শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা তারা কেন বলছেন না, প্রশ্ন করা হলে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারার জন্য এতসব অভিযোগ কিনা জানতে চান সাংবাদিকরা।

এ সময় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতারাও। উত্তরাঞ্চলের এই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নোংরামি বন্ধ না করলে রংপুরবাসী কাউকে ছাড় দিবেনা বলেও হুঁশিয়ারি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারিা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

(এম/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২১)