ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : নোয়াখালী সুবর্ণচরে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে গ্রহকদের। সাধারণ মানুষ এখনো বিদ্যুৎতের খুঁটি না পেলেও প্রভাবশালী মহলের বাড়ীতে বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে খড়ের পারা ব্যবহার করারও প্রমান পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৫ মার্চ) সরজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে প্রকৃত চিত্র, এ যেন জোর যার মুল্লুক তার।

সরজমিনে গেলে এসব অনিয়মের অভিযোগ করেন ভুক্তভেগিরা। লাইন নির্মাণে পরিমাপ করার সময় টাকা, খুঁটি আনতে টাকা, খুঁটি স্থাপন করতে টাকা, মিটারের নায্যমূল্যের চেয়েও ৩-৪ গুন টাকা টাকা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের, দাবীকৃত টাকা না দিলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া।

সুবর্ণচর উপজেলার ৩নং চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে এসব অনিয়মের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা।

চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুর গ্রামের নুর হোসেন, রহমত উল্যাহ, শেখ ফরিদ, সামছুল হক, নুর আলম, সহ একাধিক ভুক্তভোগি এসব অভিযোগ করেন, তারা বলেন," ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার সিরাজ বিদ্যুতের খুঁটি দেয়া, লাইন স্থাপন এবং মিটারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েকধাপে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন, শুরুতে বিদ্যুতের লাইনের জন্য পরিমাপ করতে দিতে হলো ৪০০/৫০০ টাকা, খুঁটির জন্য দিতে হয়েছে ১-২ হাজার টাকা এবং মিটার দেয়ার সময় প্রতি মিটারে নিয়েছেন ১৫ শ থেকে ১৭ শ টাকা।

অনেকে খুঁটি না পেলেও সিরাজ মেম্বারের শ্যালক নুর মাওলা সরকারি খঁটি নিয়ে বাড়ীর খড়ের পারা দিয়েছে, যা সরজমিনে গিয়ে প্রমান মেলে।

ভুক্তভোগী শেখ ফরিদ বলেন, আমার বাড়ীতে ২ পরিবারের জন্য ২ টা খুঁটির জন্য আমাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে এর মধ্যে ৮ হাজার টাকা সিরাজ মেম্বারকে ক্যাশ দিয়েছি বাকিটা বিদ্যুতের লোকেরা খানা খচর, লাগানো খরচের কথা বলে নিয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী নুর আলম বলেন, আমি ৪ টা খুঁটি ১৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি আমার টাকা সিরাজ মেম্বার নিজ হাতে না নিলেও আমি বাড়ীতে না থাকার আমাদের মহিলাদের কাছ থেকে টাকা গুলো নিয়েছে বিদ্যুৎতের কর্মিরা এবং সিরাজ মেস্বারও তাদেরকে দিতে বলেছেন, আমাদের বাড়ির মহিলারা সেই টাকা পরিশোধ করে খুঁটি নিতে বাধ্য হয়েছে।

ভুক্তভোগী নুর হোসেন বলেন, লাইন দিতে আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে সিরাজ মেম্বার এরকম বহু মানুষের কাছ থেকে সিরাজ মেম্বার টাকা নিয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী রহমত উল্যাহ বলেন, খুঁটি নির্মাণের সময় লাইন পরিমাপ করার জন্য আমাদের কাছ থেকে একাধিকবার টাকা নিয়েছে সিরাজ মেম্বার। টাকা না দিলে খঁটি মিলেনা সাধারণ গ্রাহকদের অথচ সিরাজ মেম্বারের শালা নুর মাওলা সরকারি খুঁটি দিয়ে বাড়ীতে খড়ের পারায় ব্যবহার করছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

এসব অনিয়মের সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রকাশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নুর মাওলা বলেন, আমি ট্রলি চালায় সেজন্য একটা ভাঙ্গা খুঁটি বিদ্যুৎ কর্মিদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি, কার কাছ থেকে খুঁটি নিয়েছেন তিনি তার নাম জানেনা বলে জানান। তিনি আরো বলেন আমার ধুলাভাই রাজনিতী করে তিনি যদি বিদ্যুৎতের টাকা নিয়ে থাকেন তা তিনি অন্যায় করেছেন সেটা তিনি বুঝবেন। আমি আমার ধুলাভাইয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু করিনা।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সিরাজ মেস্বারের সাথে মুঠোফোন আলাপকালে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, বিদ্যুৎ লাইন দেয়ার আমি কেউ না, আমি কারো কাছ থেকে এক টাকাও নেয়নি, একটি প্রতিপক্ষ আমাকে ছোট করার জন্য এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। টাকা নিলে নিবে বিদ্যুৎ বিভাগ আমি কেন টাকা নিবো, এসব মিথ্যা অভিযোগ।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুবর্ণচর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম জাহাঙ্গীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, সরকারি জিনিস পত্র ব্যবহার করার সুযোগ নেই, এটা দন্ডনীয় অপরাধ, আর আমাদের কর্তকর্তা কর্মচারীরা মাঠে কাজ করতে গেলে কাউকে ১ টাকা দিতে হয়না, এসব হলো সরকারি কাজ কেউ যদি আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ টাকা লেনদেন করেন তাহলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আমি আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করবো অথবা সাধারণ মানুষ এক হয়ে ঐসব অপরাধিদেরকে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করুন। আমি এই এলাকায় নতুন জয়েন করেছি এখনো অনেকে চিনি না, আমি এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখবো।

(এস/এসপি/মার্চ ১৬, ২০২১)