আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে এই টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। এই টিকা যে নিরাপদ তার জন্য আরও যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলছে তারা। তবে এর মধ্যেও কয়েকটি দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। খবর: বিবিসি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের সহায়তায় তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর বেশ কয়েকজনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগে জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের ১৩টি দেশ এর ব্যবহার স্থগিত করেছে। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে।

তবে পোল্যান্ড এবং বেলজিয়ামসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনা টিকা ব্যবহার বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, এই টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বেঁধে মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। তারা এই টিকার ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়। তাদের টিকা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার এই টিকা নিয়ে আবারও বৈঠক করেন।

ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) তাদের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ইএমএ জানায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় এখনো তাদের ‘দৃঢ় বিশ্বাস’ রয়েছে। ইএমএ প্রধান ইমার কুক উল্লেখ করেন, কয়েকটি দেশে রক্ত জমাট বাঁধার যে খবর পাওয়া গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি তুলনামূলক সাধারণ ঘটনা।

তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে জোর দিয়ে বলতে চাই টিকা দেয়ার কারণে রক্তে জমাট বেঁধেছে এর কোনো প্রমাণ নেই।’

তার এই বক্তব্য ‘ইতিবাচক’ বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে টিকার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকানেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধছে- এমন অভিযোগে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে ডেনমার্ক। এরপর তাদের অনুসরণ করে নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড। এরপর জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, সুইডেনসহ মোট ১৩টি দেশ এই টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে দেয়।

এসব দেশে টিকা ব্যবহার স্থগিত করার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, টিকা ব্যবহারের কারণে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। যা আশা করা হয়েছিল, রক্ত জমাট বাঁধার হার তার চাইতে বেশি নয়। এই ঘটনা এখন পর্যন্ত নিবন্ধন পাওয়া সব টিকার ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।

তবে পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, পেরু, চেক রিপাবলিক এবং ইউক্রেন টিকার ব্যবহার অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়।

এদিকে ইউরোপের এসব দেশে এই টিকার ব্যবহার বন্ধ রাখলেও এমন পরিস্থিতির মধ্যেই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা মঙ্গলবার টিকা নিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের আহ্বানে থাইল্যান্ডে টিকাদান স্থগিত করা হয়েছিল। মঙ্গলবার থাই প্রধানমন্ত্রীর টিকা নেয়ার মাধ্যমে দেশটিতে আবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৭, ২০২১)