উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : ফরিদগঞ্জে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আইন অমান্য করে অন্যের ফসলি জমি থেকে অবাধে মাটি কাটছে এক প্রভাবশালী। স্থানীয় প্রশাসন মাটি কাটা বন্ধ করতে বললেও তাতে কাজ হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ মুখ খুলছে না।

অভিযোগ রয়েছে, নিরীহ কৃষক আব্দুল মান্নানের ফসলি জমি থেকে না জানিয়ে ফিল্মি স্টাইলে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন খোরশেদ আলম পাটোয়ারী। তিনি এ পর্যন্ত ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছেন প্রায় বিশ লাখ টাকার মতো। উক্ত জমিতে মাটি কাটার নিষেধাজ্ঞায় ১৮৮ ধারা জারি থাকলেও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রথমে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটা শুরু করে খোরশেদ আলম পাটোয়ারী। পরবর্তীতে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দিনে ও রাতে বিরতিহীনভাবে তারা মাটি কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ফরিদগঞ্জে কি জোর যার মুল্লুক তার ? অন্যদিকে প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০০ সালে জমির মালিকানার জন্য মামলা দায়ের করেন আব্দুল মান্নান। অবশেষে ২০১৬ সালে কোর্ট ডিক্রি জারি করে তাকে জমির মালিকানা হস্তান্তর ও ভোগদখল করার হুকুম দেন আদালত। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা একাধিকবার সেখানে গিয়ে উক্ত মাটি কাটার কাজে খোরশেদ আলমকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসনের অগোচরে ও রাস্তায় পাহারা বসিয়ে অবৈধভাবে তারা মাটি কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ি সংলগ্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে কাটা মাটিগুলো পিকআপে করে অন্যত্র নেয়া হচ্ছে। সেখানে মাটি কেনাবেচার কারবার করছেন স্থানীয় মেসার্স মশিউর রহমান ব্রিক ফিল্ডের মালিক।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বর্গাচাষী আলমগীর ও আবু তাহের বলেন, আমরা এই জমিগুলো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু সেগুলো খোরশেদ আলম এবং তার সন্তানরা জোর করে দখল করাতে বিগত একবছর আমরা জমি চাষ করতে পারছি না। তারা ক্ষমতার জোরে আমাদেরকে চাষ করতে দিচ্ছে না।

জমির মালিক আব্দুল মান্নান জানান, সম্পূর্ণ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে খোরশেদ আলম গং জোর করে আমাদের জমি দখল করে খাচ্ছেন। আমি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিই। আদালত আমার পক্ষে রায় দিলেও পুলিশ কার্যকর ভূমিকা না নেওয়াতে তারা জোর করে আমাদের ভূমি দখল করে মাটি বিক্রি করছে।

এদিকে অভিযুক্ত খোরশেদ আলমের ছেলে ফয়সাল অন্যের ভূমি দখল করে সেখানে ছোট একটি ঘর করে রাতের বেলায় অবস্থান করে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম পাটোয়ারীর সন্তান ফয়সাল সাংবাদিকদের সংবাদ পেয়ে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হন। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, এটা আমাদের জায়গা। আপনারা কেন এসেছেন? এই কথা বলে সে মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।

স্থানীয় মেম্বার আলী হায়দার পাটোয়ারী উজ্জ্বল জানান, এই ঘটনার পর আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম দুই পক্ষকে বসিয়ে সমাধান করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য হয়ে কী করতে পারি?

ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে ব্রিকফিল্ড মালিক জানান, যারা আমার কাছে মাটি বিক্রি করার কথা তারা আমাকে মাটি দেয়নি। শুনেছি তারা নাকি অন্যত্র মাটি দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে ১৬ একরের অন্দরে ৮ একরের মালিকানা দাবির প্রেক্ষিতে আদালত কর্তৃক আমাকে রিসিভার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেয়া হবে। আমি এসআই আনোয়ারকে দায়িত্ব দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

(ইউ/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২১)