অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে ঝিনাইদহ জেলার ইউনিয়ন পরিষদ ‘হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেরে মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেনের দপ্তরে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করেন জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত উদ্যোক্তারা। অভিযোগ পত্রে ১০ জন ইউডিসি স্বাক্ষর করেছেন।

অভিযোগ করা হয়েছে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া মহামান্য আদালতে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নম্বর ১৩০৪৮/২০১৯, ১৪১৩৪/২০১৯ এবং ১৪৮৮৮/২০১৯ এ সর্বমোট ৫৩ জন প্রার্থী যার মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা থেকে ৪৮জন প্রার্থীর পদ শূণ্য রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে মাত্র ১৮টি পদ শুন্য রেখে বাকী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে ৯ জন প্রার্থীকে কোন লিখিত পরীক্ষা না নিয়েই অগ্রাধিকার প্রার্থীর তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। এই রোলগুলো হচ্ছে ৬৭৯, ৫৩৯, ৪৭১, ৫৪৮, ১১৪, ৭০২, ২১৪, ৫৮৭ ও ১২৬৩। কি ভাবে তারা নিয়োগ পেলেন এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগে দাবী করা হয়েছে ৪৮ জন রিটকারীকে মামলা তুলে নেয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৭নং মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা অনুপ কুমার। তিনিই টাকার বিনিময়ে ২১ জন রিটকারীকে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে মামলা থেকে সরে দাড়ানোর মুচলেকা লিখে নেন। যার দরুন ঝিনাইদহ জেলাতে ৪৯টি ইউনিয়নে ‘হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ এর শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দিতে সক্ষম হন।

তবে উদ্যোক্তা অনুপ কুমার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সব সময় মামলা চালানোর বিপক্ষে ছিলাম, কারণ সরকারী নীতিমালার সঙ্গে আমাদের দাবী সঠিক ছিল না। ‘হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে নিয়োগ পেতে হলে কমার্সের ছাত্র হতে হবে। তিনি স্বীকার করেন বিদায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে মামলা খরচ বাবদ আমরা অর্থ দাবী করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেদিন কেও আসেনি। পাল্টা অভিযোগ তুলে অনুপ কুমার বলেন, এই মামলা চালানোর আড়ালে কিছু ইউডিসি বানিজ্য করছে। তাদের ব্যবসা সফল হচ্ছে না বিধায় নতুন নতুন অভিযোগ করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের বিদায়ী জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, যথাযথ আইন মেনেই নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডে তো আমি এখা ছিলাম না। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার, পৌরসভার মেয়ার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। সবার সাক্ষরে রেজুলেশন লেখা হয়েছে। কোন আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন ১৮টি পদ শুন্য রেখেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওরা যদি আইনী লড়াইয়ে জয়ী হয়, তবে শুন্যপদে যোগদান করতে পারবেন।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, আমি আসার আগেই নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তিনি আরো জানান, আমাকে সার্কিট হাউসে বসিয়ে রাখার বিষয়টি বোধহয় ঠিক নয়। কারণ আমি ৬ মার্চ এসে ৭ মার্চ যোগদান করেছি। আর নিয়োগ হয়েছে তার আগে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেনের ব্যাক্তিগত সহকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফয়সাল জানান, ঝিনাইদহ থেকে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা একটি অভিযোগ স্যারের কাছে জমা দিয়েছেন। স্যার বলেছেন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(একে/এসপি/মার্চ ২৫, ২০২১)