বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে দেশের দ্বিতীয় আধ্যাত্বিক রাজধানী হযরত খানজাহানের (রহ:) মাজার শরীফের দীঘিতে মিঠাপানির বিলুপ্তপ্রজাতির ‘কালাপাহাড়’ নামের মা কুমিরটি শুক্রবার ভোর রাতে অর্ধশত ডিম পেড়েছে। খানজাহানের বিশাল দীঘির পূর্বপাড়ে মাটি খুঁড়ে ডিম পাড়ে। মাজার শরীফে আসা হযরত খানজাহানের ভক্ত-আশেকান ও পর্যটকরা কুমিরের ডিম পাড়ার খবর পেয়ে দেখতে আসছে দীঘির পূর্বপাড়ে বিনা আক্তরের বাড়ীতে। ডিম পেড়ে কুমির কালাপাহাড় এখন সেই ডিম ফুঁটাতে ‘তা’ দিচ্ছে। কুমিরের ওইসব ডিম থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফঁটবে বলে আশা করছে মাজার শরীফের খাদেমসহ প্রানি বিশেষজ্ঞরা। তবে, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন ও বয়স্ক হবার কারনে গত ২০ বছরে খানজাহানের শরীফের দীঘির কুমিরের ডিম থেকে কোন বাচ্চা ফোটেনি। এতকরে দেশের একমাত্র খানজাহানের শরীফের দীঘিতে শত-শত বছর ধরে বংশ পরাম্পর বসবাস করা মিঠাপানির কুমির বিলুপ্তির শংঙ্কা বাড়ছে প্রানি বিশেষজ্ঞদের। ইতিপূর্বে খানজাহানের দীঘিতে বংশ পরাম্পর বসবাস করে আসা ৫০০ এবং ৬০০ বছর বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা প্রজাতির ২টি কুমির মারা গেছে। বর্তমানে হযরত খানজাহানের দীঘিতে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে পুরুষ এবং মহিলা প্রজাতির মাত্র ২টি কুমির রয়েছে। এইদুটি কুমির মারা গেলেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিঠাপানি প্রজাতির এই কুমির। 

খানজাহানের দীঘির পূর্বপাড়ের বাসিন্ধা বিনা আক্তর জানান, শুক্রবার ভোর রাত ৪টার দিকে কালাপাহাড় নামের মা কুমিরটি তার বাড়ীর উঠানে উঠে দাপাদাপি করতে থাকে। এসময়ে তারা ঘর থেকে বের হলে কুমিরটি ডিম পাড়তে তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় দীঘির পাড়ে গিয়ে মাটি খুড়তে থাকে। মাটি খোড়া শেষ হলে কুমির কালাপাহাড় একে-একে অর্ধশত ডিম পেড়ে ধুলা মাটি দিয়ে ওইসব ডিম ঢেকে রাখতে থাকে। এসময়ে তিনি ভালো করে দেখতে গেলে কুমিরটি তাকে ধাওয়া করে।

পরে ডমিগুলো রেখে ‘তা’ দেয়া শুরু করে। সকালে এই মা কুমিরটিকে তারা মুরগীর মাংশ খেতে দিয়েছে। তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় দীঘির পাড়ে কুমির ডিম পাড়লেও ২০ বছর ধরে ওইসব ডিম থেকে বাচ্চা ফঁটছেনা। হযরত খানজাহানের ভক্ত-আশেকান ও পর্যটকরা দেখতে এসে যাতে করে ডিমে ‘তা’ দেয়া কুমিরদিকে কোন জ¦ালাতন করতে না পারে সেজন্য বাশের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেট সৃষ্টি করা হবে বলেও জানান তিনি।

হযরত খানজাহানের শরীফের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী জানান, শুক্রবার ভোর রাতে মা কুমির কালাপাহাড় অর্ধশত ডিম পেড়েছে। আমরা মাজার শরীফের খাদেম, হযরত খানজাহানের ভক্ত-আশেকানসহ সবাই আশা করছি এবার কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, হযরত খানজাহানের (রহ:) মাজার শরীফের দীঘির কুমিরের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন ও বয়স্ক হবার কারনে গত ২০ বছরে ধরে ডিম থেকে কোন বাচ্চা ফঁটছেনা। মা কুমির কালাপাহাড় ডিম পাড়ার সাথে-সাথেই সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে রেখেও বাচ্চা ফোটানো যায়নি। পুরুষ কুমির ধলাপাহাড়ের ফাল্টিলিটি না থাকায় মা কুমিরটির ডিম থেকে ফুটছেনা। দেশ-বিদেশের কুমির বিশেষজ্ঞরা খানজাহানের মাজার শরীফে এসে কুমির পর্যবেক্ষণ করেছেন।

এই দীঘিতে শত-শত বছর ধরে বংশ পরাম্পর বসবাস করা মিঠাপানির কুমির বিলুপ্তির শংঙ্কা বাড়ছে প্রানি বিশেষজ্ঞদের। ইতিপূর্বে খানজাহানের দীঘিতে বংশ পরাম্পর বসবাস করে আসা ৫০০ এবং ৬০০ বছর বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা প্রজাতির ২টি কুমির মারা গেছে। বর্তমানে হযরত খানজাহানের দীঘিতে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে পুরুষ এবং মহিলা প্রজাতির মাত্র ২টি কুমির রয়েছে। দ্রুতই প্রাপ্তবয়স্ক একটি মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ কুমির বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে খানজাহানের দীঘিতে ছাড়তে হবে। তা না হলে খানজাহানের দীঘির কুমিরের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এইদুটি কুমির মারা গেলেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিঠাপানি প্রজাতির কুমির।

(এসএকে/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২১)