রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের এলেংজানী নদীর উপর গড়াসিন এলাকায় অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী চক্রের মো. আমির হোসেন খান রিপন, আব্দুল্লাহ শুকুর, সুমন খান, মুনসুর ও মো. ডলার এর নেতৃত্বে রোড পারমিট বিহীন গতির মাহিন্দ্র ট্রাকটর যোগে নদী সিকস্তি খাস জমিতে তিন চারটি ভেকু বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। প্রতি বছর নদীতে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে গত কয়েক বছরে বন্যায় প্লাবিত হয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি, বসতভিটা, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। 

ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে গ্রামের মসজিদ সহ অসংখ্য ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও ভিটেবাড়ী, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ওই গ্রামের লোকজন আশঙ্কায় রয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সহজ সরল জনসাধারন এ নিয়ে দিন রাত আতঙ্কিত থাকলেও প্রভাবশালী মহলের ইন্দনে বালু দস্যুদের তৎপরতা থামছেই না।

এদিকে প্রকাশ্যে নদী সিকস্তি জমিতে দিন রাত ভেকু বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছেন। উপজেলার সব জায়গায় ড্রেজার ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও অদৃশ্য ক্ষমতায় বালু দস্যুদের ওই চক্র এই গড়াশিন এলাকায় বালু উত্তোলনের বাণিজ্য চালিয়েই যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে কারও ভাবনা নেই। ভূক্তভোগি গরীব ও নিরীহদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাপট না থাকায় প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলেই নানা ভয় ভীতি ও মামলার হুমকি দেন মাটি ব্যবসায়িরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কতিপয় ভূক্তভোগি জানান, বর্ষায় ব্যক্তি মালিকানাধীন কারও সম্পত্তি নদী গর্ভে বিলীন হলে আমরা সাধারনত জানি আইনুযায়ী ঐ জমি নদী সিকস্তি খাস হিসেবে গণ্য হয়। যদি তাই হয় নদীর সিকস্তি খাস জমি থেকে প্রশাসনের চোখের সামনেই ভেকু বসিয়ে বালু/মাটি কাটা এবং তা বিক্রির উদ্দেশ্যে মাটি ভর্তি মাহেন্দ্র ট্রাক চলাচল ও সরবরাহ আইনত অপরাধ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বালু ব্যবসায়ীদের এসব অনৈতিক কাজে পরোক্ষ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় নিরীহ জনগণ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সুফল পায় না।
এ ব্যাপারে গড়াসিন এলাকার মাটি ব্যবসায়ী মো. আমির হোসেন খান রিপন বলেন, নদী তীরবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন উচু ভূমি ক্রয় করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমরা মাটি বিক্রী করে থাকি। এতে আইনগত কোন বাধা নেই বলে আমি মনে করি।

দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধ মাটি ব্যবসার সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। উপজেলা প্রশাসনের সাথে পুলিশ সবসময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, অবৈধ মাটি উত্তোলণের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আমি কয়েকবার অভিযান চালিয়ে বন্ধ করেছি। বর্তমানে মাটি বিক্রি চলমান কিনা আমি অবগত নই। চলমান থাকলে অতিদ্রুত এসব অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী ও রোড পারমিট বিহীন মাহিন্দ্র ট্রাক্টর মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. মাহমুদুল হাসান মারুফ বলেন, আমি নীতিগত ভাবে অবৈধ মাটি উত্তোলণের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান নিয়ে থাকি। গত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।

(আরকেপি/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২১)