আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও : দেশের উত্তরের কৃষিতে সমৃদ্ধ জেলা ঠাকুরগাঁও। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে একটা সময় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো এ জেলার কৃষকদের। অনেক সময় সেচ দিতে না পেরে জমিতেই নষ্ট হয়ে যেত ফসল। ধার দেনা করে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে বেড়ে যেতো কৃষকদের লোকসানের বোঝা। কালের বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে সবকিছু। দেশের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সাথে সাথে ব্যবহার বেড়েছে সোলার প্যানেলেরও।

বাড়তি খরচ বা ঝামেলা না থাকায় সোলারের দিকে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার কৃষকদের। বিদ্যুৎ নিয়ে বাড়তি চিন্তা মাথা থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন কৃষকরা। হঠাৎ লোডশেডিংয়ে পানির পাম্প নষ্ট হওয়ারও চিন্তাও নেই এখন আর তাদের মাঝে।

গত বুধবার ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে কৃষকদের।

জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চারা লাগানো হয়েছে।

রহিমুল ইসলাম নামের সদর উপজেলার এক কৃষক জানান, সোলারের মাধ্যমে পানি দিলে সমস্যা হয় না। বাড়তি লোকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আগে যখন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতাম তখন বাড়তি লোক লাগতো। খরচও হতো বেশি। সেই সাথে শ্যালো দিয়ে পানি দিতে প্রচুর শ্রম দিতে হতো।

তিনি আরও বলেন, এখন আমি সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি। এখানে কষ্ট অনেক কম। বর্তমানে ১ বিঘা জমিতে সোলার প্যানেল দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা। অপরদিকে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে খরচ হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।

মরিওম, মনতাজুল, সিরাজ আলীসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, সোলারের কারণে বর্তমানে অল্প খরচে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে। আগে সিরিয়াল দিয়ে পানি নিতে হতো। এখন ইচ্ছে মতো পানি নেওয়া যাচ্ছে। শ্যালো মেশিনে তেল, মেশিন চুরি ও নষ্টের ভয় ছিল। সোলারের কারণে এখন আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

এদিকে, কৃষি অধিদপ্তরের মতে এই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। সেই সাথে তাদের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। যার ফলে বোরো ধান বিক্রি করে অনেকটাই লাভবান হবেন এই জেলার কৃষকেরা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন জানান, বোরো মৌসুমে সোলার প্যানেলের সাহায্যে জমিতে সেচ কাজ করছেন কৃষকেরা। সোলার প্যানেল ব্যবহারে কৃষকের খরচ এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ জন্য কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমে এসেছে।

(আই/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২১)