আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের আবাদের পাশাপাশি কদম পেঁয়াজ বীজের আবাদ প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে। জেলায় পেঁয়াজ আবাদে যে পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার অধিকাংশ বীজ এখানেই উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত এসকল বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। বেশি দাম হওয়ায় পেঁয়াজের এ বীজকে চাষি ও কৃষি অধিদপ্তর ‘কালোসোনা’ বলে নামকরণ করেছে। বিঘা প্রতি প্রকার ও মান ভেদে ৬ থেকে ১০ লক্ষ টাকার বীজ বিক্রি হয়। এ বীজ আবাদ করে চাষিরা অন্যান্য ফসলের চাইতে অধিক পরিমাণে লাভবান হয়ে থাকেন। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, অধিক লাভের কারণে প্রতিবছরই বীজের আবাদ বাড়ছে। এবছর বীজ বিক্রি থেকে ৩৭ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলার সদর উপজেলা, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও গোয়ালন্দে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেলা সদর, পাংশা ও কালুখালী উপজেলায় আবাদের পরিমান সবচাইতে বেশি। কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গড়িয়ানা ও দামুকদিয়া এবং পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ও কলিমহর ইউনিয়নের সাঁজুরিয়া গ্রামের ফসলী মাঠে গিয়ে দেখা যায় প্রতি বছরের ন্যায় পুরো মাঠ জুড়ে শুধু কদম পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন চাষিরা।

পেঁয়াজের উৎপাদনের পাশাপাশি জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজ আবাদ ও উৎপাদন এখানেই হয়ে থাকে। বেশি লাভের কারণে পেঁয়াজ বীজ ছাড়া অন্য কোন ফসলে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না এখানকার চাষিরা। এক বিঘা জমিতে খরচ বাদে এবং প্রকার ভেদে ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাভ হয় বলে তারা অন্যান্য ফসলের চাইতে বীজের আবাদেই আগ্রহ বেশি। গত বছর ১৬৮ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ আবাদ হলেও এবছর তা বেড়ে ১৭৭ হেক্টর আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে (২০২০-২০২১) লক্ষমাত্রার চেয়ে ৯ হেক্টর জমিতে বীজের আবাদ বেড়েছে।

প্রতি বছরের মত এবছরও পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের বেচপাড়া গ্রামের চাষি মোঃ মান্নান শেখ ও তার ভাই পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছন ৮ বিঘা জমিতে। বিঘাপ্রতি বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরী ও চাষাবাদসহ তাদের খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাবেন বলে তারা আশাবাদী। প্রকার ভেদে ৬ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়ে থাকে। গত বছরও ভালো দামে বীজ বিক্রি করেছেন। তবে বাজার দর গত বছরের মত থাকলে তারা বিঘা প্রতি ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নুর আকবর বলেন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাজবাড়ী জেলা বিশেষ ভূমিকা পলন করে আসছে। গত বছর ১৬৮ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছিল। এবছর তা বেড়ে ১৭৭ হেক্টর আবাদ হয়েছে। স্বাভাবিক হারে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ মে.টন উৎপাদন ধরা হলে ৯২ মে.টন বীজ উৎপাদন হবে জেলায়। বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে রাজবাড়ীর চাষিরা ৩৭ কোটি টাকার উৎপাদিত বীজ বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

(একে/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২১)