ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : চারা রোপনের পর থেকে ধান ক্ষেতের পাশেই কাটত কৃষক বাছির উদ্দিনের অধিকাংশ সময়। বোরোর ভালো ফলনে তার চোখেমুখে ছিল স্বপ্ন আর প্রশান্তির ছাপ। কিন্তু একদিন সকালে উঠে তিনি দেখতে পান তার সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। ক্ষেতের সব ধান হিট ইনজুরির ফলে চিটা হয়ে গেছে। 

শুধু বাছির উদ্দীন নয় সম্প্রতি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আরও প্রায় দুই সহস্রাধিক কৃষকের ১৫৮০ হেক্টর জমির বোরো ধান হিট ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর ত্রিশালে ৬৯ হাজার কৃষকের ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

আকস্মিকভাবে “হিট ইনজুরি” (অধিক তাপমাত্রা) তে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই সহস্রাধিক কৃষকের ১৫৮০ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্লাওয়ারিং মুহূর্তে ৩০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরেই ধানগুলো সব চিটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ফসলের মাঠে বাম্পার ফলন। কিন্তু ধানের শীষ সাদা রঙ ধারণ করেছে। অনেক কৃষকের ক্ষেতের ধান চিটা হয়ে গেছে। স্বপ্নের ফলন যেন হতাশায় পরিণত হয়েছে।

রামপুর ইউনিয়নের দরিল্ল্যা মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক বাছির উদ্দিন, আবুল হোসেন, খোকন মিয়া, আবুল মুনসুর, মিরু, হারুন অর রশীদ, রফিকুল ইসলাম, তাজুল, গোলাপ মিয়া, শিবলু ফকির, কুতুব উদ্দিন, আকবর আলী, ইব্রাহিম খলিল, জসিম উদ্দিন, হাসিম উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, রুহুল আমিন, আবদুল মোতালেব, রবিদাস ও কৃষানী আয়েশা খাতুনসহ অন্যান্য কৃষকের প্রায় কয়েক শতাধিক জমির বোরো ধান হিট ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

এ ছাড়াও সাখুয়া গ্রামের আবদুল মোতালেব, কাকচর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শরীফ আহমেদ ও কোনাবাড়ী গ্রামের মাজহারুল ইসলাম মনিরসহ উপজেলার প্রায় দুই সহস্রাধিক কৃষকের ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা দিশেহারা।

রামপুর ইউনিয়নের দরিল্ল্যা মধ্যপাড়া গ্রামের বাছির উদ্দিন নিজের জমিসহ বর্গা নিয়ে এক একর জমিতে হীরা-১২ প্রজাতির ধানের চারা রোপন করেছিলেন। ধানের চারা, পানি, সার ও শ্রমিকসহ খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। ভালো ফলনের আশায় ক্ষেতের আইলে আইলে কেটেছে তার অধিকাংশ সময়। চোখে মুখে ছিল স্বপ্ন আর প্রশান্তির ছাপ। সোমবার ভোরে ক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখেন সব ধান চিটা হয়ে গেছে। একমাত্র আয়ের উৎস সেই ফসল হারানোর যন্ত্রণায় তিনি পাগলের মতো ছুটে আসেন কৃষি অফিসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই এমন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানালে হতাশা নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে।

ওই গ্রামের কৃষিনির্ভর আদর্শ কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমার ৭৩ বছর বয়সে এমন নজিরবিহীন ঘটনা আর কোনোদিন দেখিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ জানান, ফ্লাওয়ারিং মুহুর্তে ৩০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে ধানগুলো সব চিটা হয়ে গেছে। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

(এল/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২১)