আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : করোনা সংক্রমনরোধে দ্বিতীয় ডোজের টিকা বুধবার সকালে বরিশালে এসে পৌঁছেছে। বিশেষ হিমায়িত গাড়িযোগে এই টিকা জেলা সিভিল সার্জন অফিসে আসে। পরে সেখানে জেলা ইপিআই ভবনের সংরক্ষণাগারে টিকাগুলো রাখা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, পাঁচটি প্যাকেটে ৫১ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। ৮এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রথম ডোজের টিকার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের ও টিকা দেওয়া হবে। জেলায় ৭৬ হাজার ৪৫৪ জন ব্যক্তি করোনার প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন।

নিবন্ধন করেও টিকা নেয়নি ৪৪ হাজার মানুষ ॥ জেলায় করোনার টিকা নিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৬০৫ জন। তবে টিকা নিয়েছেন ৭৬ হাজার ৪৫৪ মানুষ। অর্থাৎ নিবন্ধিত ৪৪ হাজার ১৫১ জন মানুষ এখনও টিকা নেননি। জেলা সিভিল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার হার ৬৩ দশমিক ৪ ভাগ। নিবন্ধিতদের মধ্যে টিক না নেয়ার হার ৩৬ দশমিক ৪ ভাগ। নিবন্ধিত ৪৪ হাজার ১৫১ জন মানুষের টিকা না নেওয়ার প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার সুযোগ এখনও আছে। যারা টিকা নেননি তারা হয়তো পরবর্তীতে নেবেন। তাছাড়া অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুকে দুধ খাওয়ানো অনেক নারী ভুলে নিবন্ধন করেছিলেন। তাদের টিকা দেওয়া হয়নি। এটিও একটি কারণ হতে পারে।

সির্ভিল সার্জন আরও বলেন, প্রথমধাপে বরিশাল জেলার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার ডোজ টিকা এসেছিলো। এবার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করার জন্য বরিশালে ৫১ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। চাহিদানুযায়ী ধাপে ধাপে টিকা পাঠানোর কথা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নগরী ও সদর উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী রেখে বাকিগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।

২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ॥ করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত এবং মৃত্যুর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এসময় ১৩৫ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত এবং বিগত ২৭ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৫জন। যা গত কয়েক মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত এবং মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত শনাক্তের শীর্ষে রয়েছে বরিশাল জেলা। এখানে ৪৮ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। সর্বনিন্মে রয়েছে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা। ওই দুই জেলায় চারজন করে মোট আটজন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।

ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস আরও বলেন, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব থাকায় করোনা সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরাকে অভ্যেসে পরিনত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের ৮ মে মেডিক্যাল কলেজের আরটি সিপিআর ল্যাব চালু হওয়ার পর এটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। গত ৬ এপ্রিল রাতে প্রকাশিত রিপোর্টে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা মোট পরীক্ষার ৩৮.৮২ শতাংশ। এর আগের দিন ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ৩১.১৮ এবং তার আগেরদিন (৪ এপ্রিল) শনাক্তের হার ছিল ২১.৬২ শতাংশ। আরটি পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ একেএম আকবর কবির জানান, মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে না মানায় সংক্রামণের হার বাড়ছে। সবাই নিজে থেকে উপলব্ধি না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবেনা। আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২১)