আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মৌসুমের শুরুতেই রোববার রাতে বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে উঠতি ইরি-বোরো ধানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নের ফসল পুড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় শুরু করেছে। 

কৃষকেরা জানান, জমির ধান গাছে মাত্র শীষ বের হওয়ায় গরম বাতাসে তা পুড়ে ধূসর রংয়ের হয়ে গেছে। জমিতে গিয়ে ধানের এমন অবস্থা দেখে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে কৃষকেদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় জানান, উপজেলায় এ বছর ৯ হাজার ৪ শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে রোববার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে রাজিহার ইউনিয়নের রাজিহার, রাংতা, বাশাইল, বসুন্ডা, বাহাদুরপুর, কান্দিরপার, বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী, বাকপাড়া, তেতলা, নওপাড়া, যবসেন, ডুমুরিয়া, কোদালধোয়া, ফেনাবাড়ি, পাকুরিতা, পয়সারহাট, বড়মগড়া, বাগধা ইউনিয়নের জয়রামপট্টি, খাজুরিয়া, চাঁদত্রিশিরা, আমবৌলা, নাগিরপাড়, সোমাইরপাড়, চক্রিবাড়ি, আস্কর, গৈলা ইউনিয়নের বুধার, কুয়াতিয়ারপাড়, নগরবাড়ি, কালুরপাড়, কাঠিরা, সুজনকাঠি, তালতারমাঠ, ভদ্রপাড়া, অশোকসেন, গৈলা, শিহিপাশা, সেরাল, রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা, দীঘিবালী, নাগার, তালতা, চাপাচুপা, মোল্লাপাড়া, নাগার, ছয়গ্রাম, মোহনকাঠি, বেলুহার, চাউকাঠী গ্রামের ফসলের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ধানের ফ্লাওয়ারিং (কেবলমাত্র ফুল বের হওয়া) হওয়ার সময়। যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সেসব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গিয়ে সাদা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় শতকরা ২৫ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কৃষি অফিসার।

উপজেলার ফুল্লশ্রী রাজিহার গ্রামের কৃষক সুবোধ হালদার জানান, কয়েকদিনে প্রচন্ড গরম ও রোববারের বাতাসে ক্ষেতের আঁধা পাকা ধান পরে গেছে। আবার অনেক জমির ধান গাছ দাড়িয়ে থাকলেও তাতে কোন শষ্য নেই। গাছ পাতা পুড়ে গিয়ে ধূষর বর্ণের হয়ে গেছে।

উপজেলার রাংতা গ্রামের কৃষক ও ব্লক ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, রোববারের ঝড়ে গরম বাতাস প্রায় আধা ঘণ্টার ব্যাপি স্থায়ী হয়। সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, ফুল বের হওয়া ধানের শীষগুলো পুড়ে গিয়ে সব ধান সাদা ধূসর বর্ন হয়ে গেছে। আমার সাড়ে চার বিঘা ক্ষেতের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি করব, কিভাবে চলব? বুঝতে পারছি না। গৈলা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ধার-দেনা করে ৩ বিঘা ক্ষেতে ধান চাষ করেছিলাম। তাও শেষ হয়ে গেল। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মরতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় বলেন, কালবৈশাখীর সাথে গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কৃষকের জমিতে ফুলসহ বের হওয়া ধানে পরাগায়ন শুকিয়ে গেছে। ধান গাছ ঠিক থাকলেও শীষগুলো শুকিয়ে সাদা ধূসর বর্ণ হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ১শত ৫০হেক্টর জমির ধান আশিংক নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০২১)