চৌধুরী আবদুল হান্নান


“প্রাকটিক্যাল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সব কিছুর লিখিত বিধান থাকে না, অনেক সময় ব্যাংক ব্যবস্হাপক নিজের ব্যুৎপত্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন”। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবার ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে নতুন করে মহা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এক পর্যায়ে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হতে থাকায় এবং টিকাদান কর্মসূচী শুরু হওয়ার কারণে মানুষ অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভেবেছিল করোনা এবার বিদায়ের পথে কিন্ত আজ বাস্তবতা ভিন্ন। বলতে গেলে, সতর্ক থাকা বা স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলার বালাই আর রইলো না।

পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আস্বাভাবিক ভিড়, বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতি গত বছরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নতুন ধরণের শনাক্ত ভাইরাস আগের ধরণের তুলনায় অধিক শক্তিশালী, সংক্রমণ ক্ষমতাও অনেক বেশি।

করোনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাব প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে যে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেখানে ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত করা এবং বিদ্যমান জনবল সমন্বয় করে কাজ করার কথাও বলা হয়েছে।
প্রাইভেট ব্যাংক সেলেক্টিভ সার্ভিস দিয়ে থাকে, গ্রাহক সংখ্যাও কম কিন্ত চাকরি মালিকের ইচ্ছায় এবং সরকারি ব্যাংকের শাখাগুলোতে মানুষ গিজগিজ করে, সকলের জন্য দ্বার খোলা কিন্ত সহজে চাকরি যায় না।

এক সাথে বহুলোক সমাগমের কারণে সরকারি ব্যাংকের শহুরে শাখাগুলো এ বিরল মরণ-ব্যাধি সংক্রমণের বড় প্রজনন ক্ষেত্র বলা যায়।

সরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকগণ যা করতে পারেন :

১। নিজের সুরক্ষা, সহকর্মীদের সুরক্ষা তারপর ব্যাংকের কাজ, এই করোনাকালে শাখা ব্যাংকিং পরিচালনা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো, ম্যানেজার যেখানে প্রধান সেনাপতি। এ অস্বাভাবিক জরুরি পরিস্হিতি মোকাবেলার জন্য অনেক সময় কারও নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা যায় না।

২। সরকারি নির্দেশনা যা দেয়ার তা দেয়া হয়েছে, সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত লেনদেনের সময়সূচী কমিয়ে আনা হয়েছে, জনবল সমন্বয় করে কাজ সীমিত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে,এখন যা করার শাখা ব্যবস্হাপক করবেন, তাঁর দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে ব্যাংক পরিচালনা ও করোনা মোকাবেলার দক্ষতা।

৩। স্বাস্হ্য-বিধি মেনে চলার স্বার্থে এক সাথে বহুলোক শাখায় প্রবেশ করবে না, ৪/৫ জনের বেশি নয়। দ্রুততার সাথে তাদের সার্ভিস দিয়ে বিদায় করে আবার কয়েকজন প্রবেশ করবে। স্বাভাবিক সময়ের মতো শাখার গেট সব সময় ওপেন থাকবে না, কেবল লোক প্রবেশ/বের হওয়ার সময় খোলা হবে।

৪। সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব কেবল গেট খোলা আর বন্ধ করা,আগত গ্রাহকদের সাথে অনবরত কথা বলবেন একজন চৌকস কর্মকর্তা যিনি হবেন ঠান্ডা মেজাজের। তিনি সরকারের নির্দেশিত স্বাস্হ্য-বিধি আর সকলের সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতে থাকবেন।

৫। একটি রেজিস্ট্রার বাইরে রাখতে হবে,গ্রাহকগণ একে একে এসে নাম লিখবে, তাতে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর স্বাস্হ্য-বিধি ভঙ্গ হবে না। নাম ডেকে প্রবেশ করানো হবে।আজ যারা বাদ পড়বেন, পরের দিন প্রথমেই তাদের কাজ করে দিতে হবে।

৬। এতো বিধি-নিষেধ গ্রহকগণ মানতে চাইবেন না, অধৈর্য হয়ে হৈ চৈ করতে পারে, অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে, সেক্ষেত্রে ব্যাংকের গেট তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিতে হবে।এক সময় পরিস্হিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আবার লেনদেন শুরু হবে। জরুরি বিবেচনায় পুলিশের সহায়তা নিতে হবে, সহায়তা করার জন্য পুলিশের প্রতি সরকারের এমন নির্দেশনা দেয়া থাকে। এখানে আপনার কোনো অপরাধ নেই, আপনি সরকারি নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন।
সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করলে এবং সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে যুদ্ধ জয় নিশ্চিত। বিনয়ের সাথে স্বীকার করছি, পরামর্শ দেয়া সহজ কিন্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার ।