ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নের এক বিষ্ময়কর বাংলাদেশ দেখতে পায় বিশ্ববাসী। সব সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে সব রাজনৈতিক দল তাদের কর্মকা-পরিচালনা করছেন নিজের মতো করে। কিন্তু কিছু মানুষ সরকারের বিরোধিতা করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সারাদেশের মানুষের কোনো সমস্যা না থাকলেও কিছু মানুষ তার বিরোধিতা করছে তাদের নিজেদের অসুবিধার কারণে। এরা একাত্তরেও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে, এখনো করছে। ধর্মের ভুল ব্যাখা দিয়ে ভাঙ্চুর, লুটপাতসহ অগ্নিসংযোগ করে দেশের যানমালের ক্ষতি করছে। এই দেশ স্বাধীন করতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সকলের লাল রক্তে একাকার হয়ে আছে দেশের মাটি। এই দেশে কেউ পরাধিন বা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয়। সবাই সমান অধিকার নিয়ে বসবাস কবে এজন্যই জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। এই দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করেছে। এদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে। 

বর্তমান করোনা মহামারি সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, করোনা থেকে বাঁচতে হবে। আমরা যদি সবাই তিনমাস ঠিকমতো মুখে মাস্ক ব্যবহার করি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে করোনা নিজেই দেশ থেকে বিদায় নিবে।

শনিবার সকাল ১১ টায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাটের অর্থায়নে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৃথক তিনটি মন্দিরের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি বলেন, ভূমি দস্যুরা দেবোত্তর ও পীরত্তোর সম্পত্তি বিভিন্নভাবে জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে। ব্রক্ষচারি শিব মন্দিরের ৪৮ শতক এবং মন্দির সংলগ্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ একর রেকডিও জমির থাকার পরও কিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়। কীভাবে এই দেবত্তোর সম্পত্তি বিক্রি হলো আর কারা কীভাবে কিনলো এগুলো বের করতে হবে।

তিনিিবলেন,দেশের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন ভূমিগুলো দখলের পাঁয়তারা চলছে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরনো মন্দিরগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে সম্মানিত করছেন। কোনভাবেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলোর ধ্বংস কিংবা বেহাত হতে দেওয়া হবে না। ঐতিহ্য রক্ষায় পুরোনো মন্দিরগুলোকে সংস্কার করতে হবে। যাতে করে আমাদের টেরাকোটার নির্মিত সুন্দর ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো বিলীন হয়ে না যায়।

তিনি আরও বলেন, করোনাকে যেমন মোকাবেলা করতে হবে। ঠিক তেমনি ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী উগ্রসাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ হেফাজতেও মোকাবেলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন এই উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক হেফাজত দেশকে অস্থিতিশীল করে শান্তি বিনষ্ট করার চক্রান্ত শুরু করেছে। গুটি কয়েক ওয়াজ ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশের শান্তি আর উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এ দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার দেশ। জাতির পিতা এই দেশে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদিপুরের ব্রক্ষচারি শ্রী শ্রী শিব মন্দিরের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফুলবাড়ী শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ধীমান চন্দ্র সাহা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) কানিজ আফরোজ, ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য মো. কামরুজ্জামান শাহ কামরু ও দিনাজপুর জেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য প্রভাষক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু।

এরপর ফুলবাড়ী উপজেলা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দির এবং উপজেলা এলুয়ারি ইউনিয়নের খাজাপুর শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি, সম্মানিত অতিথি ও বিশেষ অতিথিদ্বয় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয় প্রকাশ গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক জয়রাম প্রসাদ, ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আনন্দ কুমার গুপ্ত, সম্ভু প্রসাদ গুপ্ত, দীপলাল গুপ্ত, রিপন গুহ বাবু, কমল সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অম্বরিশ রায় চৌধুরী, ডা. নিরঞ্জন কুমার রায়, খয়েরবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মন্ডল, খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদ গোষ্ট মোহন চৌধুরী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থায়নে এই তিনটি মন্দির নির্মাণ করা শুরু করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্দির নির্মাণ কাজে ব্যয় হচ্ছে ১০ লাখ টাকা করে।

(এসিজি/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)