ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : চলতি বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হলো। ঈশ্বরদীর মুক্তিযদ্ধের পক্ষ শক্তি  রেলওয়ে 'নাজিম উদ্দীন' উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম বদলানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবী-দাওয়া জানিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এই স্কুলের নাম বদলায়নি। এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওেয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিসে নাম পরিবর্তনের জন্য কয়েকদফা স্মারকলিপিও দেয়া হয়।

বিগত বছরের ৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর ছাত্রলীগ বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে। এসময় ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্কুলের প্রধান ফটক থেকে 'নাজিম উদ্দীন' নামটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও কাজের কাজ হয়নি এখনও।

এসব খবর দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসময় নড়েচড়ে বসে। ঈশ্বরদীবাসী সবসময়ই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার দাবিতে সোচ্চার। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান (বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য) বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এই তদন্ত কমিটির সদস্য। কিন্তু সেই কমিটির প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি । তাই ঈশ্বরদীবাসী এখনও 'নাজিম উদ্দীন' নামের ভার থেকে মুক্ত হতে পারেনি ।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সুরে সুর মিলিয়ে পুনরায় ঘোষণা দেন, 'একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা'।

এরইমধ্যে ঈশ্বরদীর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলানো হয়েছে। স্থানীয় জিন্নাহ কলেজের নাম স্বাধীনতার পর পরিবর্তন করে ঈশ্বরদী কলেজ (পরে সরকারি) করা হয়। অথচ বাংলা ভাষার বিরোধিতাকারী এই রাজনীতিকের নামে ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত 'বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের' নাম এখনও বদলানো হয়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার আব্দুর রহমান জানান, প্রায় এক বছর আগে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে এই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার জন্য আমি এই এলাকার এমপি হিসেবে রেলওয়ে মন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছি।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের নাম বদলানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম নাম পরিবর্তন অবশ্যই হবে জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক পরিবর্তন হওয়ায় এই সংক্রান্ত আলোচনা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে দ্রতই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)