আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলা আওয়ামীলীগ নেতার বসতবাড়ি থেকে হাসান আলী (৫৪) নামে এক জুতা ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক  মাসুদ রানা কে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ ।  

১০ এপ্রিল শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান নামের ব্যবসায়ির মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত হাসান আলী গাইবান্ধা শহরের গোড়স্থান পাড়া এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে। তিনি শহরের ষ্টেশন রোড়ের আফজাল সুজ শো-রুমের স্বত্তাধিকারী ছিলেন।

স্থানীয়রা জানায়, মাসুদ রানা জেলা আওয়ামীলীগ নেতা হলেও সে একজন পেশাদার দাদন ব্যাবসায়ী। আর্থিক লেনদেনের জের ধরে হাসান আলীকে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে গত ১৩ মার্চ থেকে আটক করে রাখে মাসুদ রানা। আজ সকালে মাসুদ রানার বাড়ির একটি রুম থেকে হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সকালে আমরা খবর পাই যে রানার বাড়ীতে একটি বন্ধ ঘরে একজন ঝুলিয়ে রয়েছে এরপর পুলিশ গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। যেহেতু বাড়ীটি রানার সে জন্য এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ রানাকে আটক করা হয়েছে ও এবিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, পাওনা টাকার সুদের কিস্তি না দেয়ায় টানা এক মাস ওই ব্যবসায়ীকে মাসুদ রানার বাড়িতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয় বলে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগমের সদর থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে জানা গেছে।

হাসান আলীর স্ত্রী গত ৭ মার্চ থানায় এক লিখিত অভিযোগে জানায়, মাসুদ রানা একজন দাদন ব্যবসায়ি। তার কাছ থেকে ঋণ নেয়া টাকার সুদের কিস্তি দিতে না পারায় গত ৬ মার্চ হাসান আলীকে সকাল ৯টায় তার গোড়স্থান পাড়ার বাসা থেকে মাসুদ রানা ব্যবসা সংক্রান্ত কথা আছে বলে নিজ মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে চলে যায়।

এরপর মাসুদ রানা তার নিজ বাসায় হাসানকে আটকে রাখে মানসিকভাবে নানা ধরণের নির্যাতন চালায় এবং ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। হাসান আলী তার স্ত্রী বিথী বেগমকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করলে ওই বাড়ি থেকে সে তার স্বামীকে নানাভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে মাসুদ রানার বাড়িতেই আটক থাকে হাসান আলী। আজ ১০ এপ্রিল তার মৃতদেহ ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে হাসান আলীর স্ত্রী বিথি বেগম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগে উল্লেখ করেন, হাসান আলীকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানাকে হ্যান্ডকাপ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে ও কোমরে দড়ি লাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।

এ সময় বিক্ষুব্ধ অনেকে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে মাসুদ রানার হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে এবং হেলমেট পরিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এ হত্যার ঘটনাটি শহরেসহ গোটা জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং তা টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে গাইবান্ধা।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, হাসান আলী আত্মহত্যা করলে তার নিজ বাড়িতে করবে। মাসুদ রানার বাড়িতে হাসান আলী কেন আত্মহত্যা করবে? এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

(এস/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)