মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর নানা মহল থেকে দাবি উঠে পর্যটন সমৃদ্ধ প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে করোনার নমোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের। বছর পার হয়ে ঊর্ধ্বমুখী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও সে দাবির কোন অগ্রগতি আজও পরিলক্ষিত হয়নি। এনিয়ে জেলাবাসীর বিভিন্ন মহলে বাড়ছে ক্ষোভ, হতাশা ও সংশয়। সাংসদ থেকে মন্ত্রী পর্যায়ে ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে ঠিকই তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্তÍ তথ্যনুযায়ী ফলাফল শুণ্য। মৌলভীবাজার জেলায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমোনার বেশিরভাগ পরীক্ষা করা হয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে, ফলে সেখানে পাঠানো নমোনা পরীক্ষার পর ফলাফল আসতে সময়ও লাগছে অনেক বেশি। সচেতন মহল মনে করছেন ঊর্ধবমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজন দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপনের।  

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিসিআর ল্যাব স্থাপন না হলেও চলতি এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নমোনা পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে থাকা টিবি রোগ নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র রয়েছে সেটা দিয়ে ছোট্র পরিষরে নমোনা পরীক্ষা করা যাবে তবে এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমানের কিট সাপ্লাই যা এখনো শুরু হয়নি। কবে নাগাদ কিট আসতে পারে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

গত ১এপ্রিল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের মুখমুখি হন সিভিল সার্জন ডা: চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ। এসময় পিসিআর ল্যাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়ে ছিলেন, এপ্রিলের শেষের দিকে কিংবা মে মাসের দিকে মৌলভীবাজার পিসিআর ল্যাব স্থাপনের আশ্বাসের কথা। এসংক্রান্ত অগ্রগতির বিষয়ে জানতে গত ১০ এপ্রিল শনিবার দুপুরের দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গেলে দেখা হয় তার সাথে। এসময় তিনি জানান, পিসিআর ল্যাব কখন কবে স্থাপন হবে তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছেনা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সমন্বয়কারী,পরিবেশবাদী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক আসম সালেহ সোহেল বলেন, সরকারের মৌলভীবাজারের উন্নয়ন নিয়ে আমরা অনেকটা অন্ধকারে আছি। করোনার নমোনা পরীক্ষার জন্য আমাদের দাবি ছিল দ্রুত পিসিআর ল্যাব যাতে স্থাপন হয়, কারন অনেক সময় দেখা যায় নমোনা পরীক্ষার রেজাল্ট সিলেট থেকে আসতে একসাপ্তাহ লেগে যায়। যার কারনে রেজাল্ট আসার আগেই কখনো কখনো রোগীও সুস্থ হয়ে যায়। এসব কারনে সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় চরম বিভ্রান্তিতে।

তিনি বলেন, আমাদের সচেতন মহলের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতেও পিসিআর ল্যাব স্থাপন না হওয়াটা এখানকার জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা বলে আমি মনে করছি।

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়,করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত মার্চের ২২ তারিখ থেকে চলতি এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় ৭৫০টি নমোনা সংগ্রহ হলে তাতে ১৮৩ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। আর মৃত্যু হয় ৩ জনের। সর্বশেষ ৯ এপ্রিল শুক্রবার মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শহরের রঘুন্দনপুর এলাকার বাসিন্দা মনছব আলী (৬৮) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর আগে ২৩ মার্চ একই হাসপাতালের আউসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শহরের শেখেরগাও এলাকার সৈয়দা আফসারুন্নেছা নামে এক মহিলা ও ৩১ মার্চ শ্রীমঙ্গলের মনির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের ৩১ জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার জেলাকে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে রাখা হয়। এর পর থেকে জেলায় বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণের হার। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে সরকারের জারি করা ১১দফা নির্দেশনার আলোকে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সাপ্তাহের ঢিলেঢালা লকডাউন,যা শেষ হচ্ছে আজ।

(একে/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০২১)