শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দেশে ভুট্টার নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন  ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য বয়ে এনেছে, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট। তবে, এবার ব্যাপকহারে বিধ্বংসী পোকা ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুট্টাচাষিরা। বালাই-নাশক দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বরছেন, আতংকিত না হয়ে বীজ পরিশোধন ও বালাই নাশক ব্যবহারে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। এজন্যে কাজ করে  যাচ্ছে,বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনষ্টিটিউট।

ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে ভুট্রা চাষের পরিধিও বেড়েছে । বর্তমানে দেশে দ্বিতীয় প্রধান দানাদার ফসল ভুট্টার চাহিদা আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ লাখ মেট্রিক টন। তাই, গত পাঁচ বছরে ভুট্টার উৎপাদন ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষক বলছেন, ধানসহ অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্রা চাষে সেচ কম লাগে তেমনি খরচও কম। বারি-১৬ রোগ প্রতিরোধী উচ্চফলণশীল ভুট্টার নতুন জাত কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌছায় এবং গত কয়েকবছর বাজার দর ভালো পাওয়ায় ভুট্রা চাষে আগ্রহ বেড়েছে, কষকের। কিন্তু,এবার ব্যাপকহারে বিধ্বংসী পোকা ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভূট্টাচাষিরা। এ পোকা গাছের পাতা, কান্ড খেয়ে ফেলছে। বালাই-নাশক দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

এমনটাই জানালেন, বোচাগঞ্জ উপজেলার মাহেরপুর এলাকার কৃষক মো.মতিয়ার রহমান। শুধু মতিয়ার রহমান নয়, দিনাজপুরের অসংখ্য কৃষক এখন ভুট্রা চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। সদর উপজেলার সুন্দরবন এলাকৃও কৃষক গুলজার ও দবিরুল জানালেন,তারা উভয়ে এখন সংকটেভুট্টা চাষ করে। বালাই নাশক প্রয়োগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

তব, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন,আতংকিত না হয়ে বীজ পরিশোধন ও বালাই নাশক ব্যবহারে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। এজন্যে কাজ করে যাচ্ছে, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট।ভুট্রার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কর্মশালাও হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২৫ জন বিসিএস কৃষি ক্যাডারের মহিলা কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাতে অংশ গ্রহণ করেন। এই কর্মশালা মূলতঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত মহিলা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে এবং কীটনাশক এর বিষক্রিয়া ঝুঁকি হ্রাসকল্পে কৃষকদের বিশেষ করে মহিলা কৃষকদের যে কোন রকম কৃষি পরামর্শ প্রদানে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা দমন ও প্রতিকারে মাঠে অত্যাধুনিক ডিজিটাল মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে মাঠে। এমনটাই জানালেন,বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর উধবর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাড.মোস্তাফিজুর রহমান শাহ।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন জানালেন, গত ১০ বছর আগে যেখানে ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন, বর্তমানে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন।পাশাপাশি অটুট রয়েছে ভুট্টার গুণগত মানও। রোগ প্রতিরোধী উচ্চফলণশীল ভ্রট্রার নতুন নতুন জাতগুলো চাষিদের ভুট্রা চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ভুট্টার উৎপাদন ৩৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনস্টিটিউটটের বিজ্ঞানিদের প্রজ্ঞা, মেধা ও অক্লান্ত শ্রমে এ পর্যন্ত ভুট্রার ১৭টি হাইব্রিড জাত, ৭টি ওপেন পলিনেটেড কম্পোজিত জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। উদ্ভাবিত নতুন প্রজাতি ভুট্রা কৃষকদের সরবরাহ করা হলে আগামীতে ভুট্রার উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যদিও বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট এ পোকা দমনে কাজ করছে, কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা কৃষক। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে ভুট্রা চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(এস/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২১)