ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের দরবেশের হাটে পথচারীকে মেরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনাটি ঘটে ১৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সুবর্ণচর উপজেলার ৪ নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চরকাজি মোখলেছ গ্রামের দরবেশের হাট বাজারে।

জানা যায়, মোটরবাইক জোরে চালানোকে কেন্দ্র করে সফি নেতার ছেলে ইসমাঈল হোসেনকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বাজারের উপরে হুন্ডার গতিরোধ করে লাঠি সোটা, দেশীয় অস্ত্র ও ইট দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। প্রায়। ২ ঘন্টা ধরে চলে এই তান্ডব, স্থানীয়ারা তাকে বাঁচাতে এলে তাদেরকেই মারধর করে সন্ত্রাসীরা।

খবর পেয়ে ইসমাঈলের স্ত্রী তাকে বাঁচাতে এলে তাকেও যৌন হয়রানীসহ বেধড়ক মারধর করে।

ইসমাঈল অজ্ঞান হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত ভেবে রাস্তার পাশে পেলে রেখে চলে যায়।

পরে এলাকাবাসী ইসমাঈল ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে (করোনার কারনে লকডাউন করায়) পাশবর্তী ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

আহত ইসমাঈলের ভাই মাইন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমরা নিতান্তই নিরীহ, এই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে বেডাচ্ছে আজু মেম্বারের ছেলে জয়নালের নেতৃত্বে এলাকায়,চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, গুম, চুরি, ডাকাতিসহ রাহাজানি করে আসছে দির্ঘদিন ধরে। সে আরও বলে, আজু মেম্বারের সন্ত্রাসী পুত্র ২টি খুনের মামলা ও একাধিক মামলার আসামী বাবুল, কামাল, শাহেদসহ স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমাদের পরিবার এবং নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর হামলা চালায়।

এই সন্ত্রাসী জয়নাল গ্রুপের সাথে যোগ দেয় ওবায়দুল হক অধুর ছেলে কোবা কামাল,কোবা জামাল,কোবা সেলিম ও কোবা বেলাল গ্রুপের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করে না। কেউই কথা বললেই তাকে হতে হয় মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার। উপরোক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্বে চরজব্বার থানায় একাধিক এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা আইনেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং গ্রেফতারের পর আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করে। এলাকাবাসী এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছে।

এলাকাবাসী বলেন, বর্তমানে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য আজু মেম্বারের ছেলে জয়নালগঙ্গরা দীর্ঘদিন ধরে তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। ইতিপূর্বে ইভটিজিং ও অপহরণ মামলায় জেলে গিয়ে কৌশলে জামিনে এসেছে বাবুল। তার বাবা বর্তমান মেম্বার বলে ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলেনা। জয়নাল ও বাবুলের বিরুদ্ধে ২টি খুনের মামলা সহ একাধিক মামলা রয়েছে, জিআর মামলা নং ৫৬০/২০১৭ (খুনের মামলা), জিআর ৩৬/২০১৯ (হত্যার উদ্যেশ্য হামলা) এবং সিআর১৮১/২০১৩ মামলা রয়েছে।এমনকি আপন ভগ্নিপতিকেও হত্যার অভিযোগ বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

এছাড়াও এলাকায় মদ,গাঁজা ও ইয়াবা সেবন ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই সন্ত্রাসী গ্রুপ। প্রতিবেদক আজু মেম্বারের সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমাকে সমাজে ছোট করতে প্রতিপক্ষের কৌশল মাত্র।

৪নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, আজু মেম্বারের ছেলে বাবুলের বিরুদ্ধে তার ভগ্নীপতিকে খুনের অভিযোগে একটি হত্যা মামলাসহ ৩/৪ টি মামলা রয়েছে, এরা কেউ বিচার শালিস মানেনা, এ ধরনের মারধরের বিষয়ে একাধিকবার থানায় বিচার শালিস হয়েছে।

চরজব্বার থানার ওসি বলেন, ভুক্তভোগিরা থানায় এসেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তভোগি ইসমাঈল, মাঈন উদ্দিন, হাছিনা বেগম বর্তমানে নিরাপত্তায় দিনাতিপাত করছেন এবং প্রাণহানীর আশংকা করছেন। ভুক্তভোগীরা ও শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী এই ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার উপযুক্ত বিচারের দাবীতে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও চরজব্বার থানার ওসি জিয়াউল হক তরিক খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

(এস/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২১)