দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের ৫০ বছর আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এইদিন। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরে ভার্চুয়ালি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ১০ টায় আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। দিবসের উপর বিশেষভাবে তথ্য উপস্থাপন করেন সভার সভাপতি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপক রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন পুলিশ সুপার মোঃ আলীমুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুবল সাহা, ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাব বোস, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশার্রফ আলী, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান, রাসিনের নির্বাহী পরিচালক আসমা আক্তার মুক্তা প্রমুখ।

উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বিগত বছরগুলোতে নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হলেও গত বছরের (২০২০) ধারাবাহিকতায় এ বছরও দিবসটি এসেছে নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা করোনাভাইরাস বাঙালিকেও ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বর্তমানে দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। এ কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালনের করা হচ্ছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সরকারের ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী করা হয় এএইচএম কামরুজ্জামানকে। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। মুজিবনগর সরকারের হাত ধরে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২১)