শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : সুস্থতা ফিরে পেতে প্রায় ৫ মাস বন্দী থাকার পর অবশেষে দিনাজপুরে মুক্ত আকাশে ডানা মেলেছে ১৬টি শকুন। পরিবেশের পরম বন্ধু এই শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করণ ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বৃদ্ধিমুলক কর্মসূচীর আওতায় দিনাজপুরে ১৬টি শুকুন চিকিৎসা সেবা শেষে সুস্থ্য করে অবশেষে তাদের অবমুক্ত করা হয়েছে।এসময় উদ্ধারকৃত ১৬টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে  উইংক ট্যাক পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। এ দৃশ্য অবলোকন করেছে,শকুর প্রেমি অনেকেই।

শকুন এক প্রকার পাখি। এটি মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ।বিশালাকার গাছে সাধারণত শকুন বাসা বাঁধে। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।

দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়। তাই এই শকুন দেখতে এখন মানুষ ভীর করছে। পাঠ্যপুস্তকে পড়লেও বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থরা।

শকুনকে বলা হয় প্রকৃতি’র ঝাড়ুদার। তবে একসময় মানুষ মনে করতো শকুন পাখিটা অশুভ। অনেকে আবার মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করতেন এটিকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শকুন অশুভ তো নয়ই, হিংস্্রও নয়। চিল, ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারিও নয়। এটা আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। মৃত পশু খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন কখনোই জীবিত মানুষকে আক্রমণ করে না।

চ্যানেল আইয়ের প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু জানান, গবাদিপশুর চিকিৎ্সায় ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার শকুন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ওই ওষুধ ব্যবহার করা গরু ও ছাগলের মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শকুন মারা যায়। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে গবাদিপশুর চিকিতৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

তবে কোথাও কোথাও এখনও ব্যবহার হয়। অন্যদিকে ফসলের মাঠে কীটনাশক ও সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির দূষণ, খাদ্য সংকট, কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে শকুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার, বিমান-ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ, ঘুড়ির সুতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাবে বিভিন্ন রোগ, বাসস্থানের অভাব প্রভৃতি কারণ জড়িত রয়েছে। শকুনের বাসা বাঁধার স্থানের অভাবের জন্য তাদের বংশবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলো মিটার উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্ট। দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো.বশিরুল আল মামুন জানান, প্রায় ৭’শ একর বিস্তৃত জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্ট এর বিশাল বনভুমিতে উদ্ধারকৃত ১৬টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে উইংক ট্যাক পরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বন বিভাগের উদ্যোগে প্রায় ৫ বৎসর ধরে বিলুপ্ত ও বিপন্ন শুকুন বাঁচাতে আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থী,বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীর মানুষ অংশ গ্রহণে “শকুন উদ্ধার ও অবমুক্ত করণ ও বিষয়ক আলোচনা সভা ওকার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্ত এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে আলোচনা সভা স্থগিত রয়েছে।

নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির পরমবন্ধু এই শকুন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই শকুনকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতারও তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতি প্রেমিরা।

(এস/এসপি/এপ্রিল ১৮, ২০২১)